Sunday, September 4, 2011

শিঙ্গালিলা ট্রেক ( সান্দাকফু–ফালুট )

( লেখাটি পড়ার আগে একটু জানিয়ে দেয় আমার ভাষা জ্ঞান কতটুকু । আমি অনেক বছর ধরে বাংলাতে কোন লেখা পড়েনি বা লেখেনি । আমি কোন পাঠককে টারগেট করে এই লেখা লেখেনি । আমি কোন লেখক নোই । শুদ্ধ বানান লেখার মত চর্চা একেবারেই নেই আমার । তাই এ লেখাই অনেক ভুল পাবেন । আমি ভবিষ্যতে চেষ্টা করব আমার লেখা আরও উন্নত করতে আর আশাকরি আপনারা আমার এই প্রয়াসকে একটু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন )
সান্দাকফু  পশ্চিম বাংলার সর্বচ্চ চূড়া।  এর উচ্চতা ৩৬৩৬ মিটার।  সান্দাকফু অর্থ “Height of the Poison Pants”. সান্দাকফুর চূড়ার কাছে বিষাক্ত গাছ জন্মায় সেখান থেকে নাম এসেছে ।  ফালুট দ্বিতীয় সর্বচ্চ চূড়া যার উচ্চতা ৩৬০০ মি । ফালুট কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে মাত্র ৪৮কিমি দূরে ।  সান্দাকফু আর ফালুট সাঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত আর সান্দাকফু – ফালুট ট্রেক দার্জিলিং  সিক্কিমের একটি অন্যতম  ট্রেক যা “Singalila Ridge Trek” নামে পরিচিত ।
২০১০ এর নভেম্বরের ৫ তারিখে আমরা মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু – ফালুটের উদ্দেশ্যে ট্রেক শুরু করেছিলাম ।  আমাদের এই ট্রেক আমাদের কাছে অনেক ভাল লেগেছিল কারণ  আমরা প্রতিদিন নতুন বৈচিত্র পেয়েছি । প্রথমদিনে ৩০৭০মি উঁচু টংলুতে উঠে সেখানে পাহাড়ি মুরগী খেয়ে দাঁত খিলাল করতে করতে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছিলাম । টুম্বলিং এ সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখলাম অন্যরূপে । পরের দিন গাইরিবাসে ভুতুরে পথ দিয়ে হেঁটে আর  পথে রেড পান্ডা খুঁজতে খুঁজতে পোঁছালাম কালাপখারিতে । সেখান থেকে মেঘের মধ্যে হেঁটে উঠে গেলাম ৩৬৩৬মি উঁচা সান্দাকফুতে । সেখানে ঠাণ্ডায় ঘুমানোর কষ্ট  আর আবার সকালে টইলেটে ঠাণ্ডা পানির কষ্ট । পরের দিন ফালুট যেতে পেলাম স্বপ্নের মত এক পথ  । ফালুটে সকালে ঠাণ্ডা ঝড় হাওয়াতে চূড়ায় উঠলাম রেনকোট পরে আর ৪৮কিমি দূর থেকে দেখলাম কাঞ্চনজঙ্ঘাকে । সেখান থেকে নেমে গেলাম ১৪৫০ মি নিচে  গুরখেতে আর সেখানে গা ধুলাম বরফ গলা পানিতে । সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রেক করে ব্যাথা পা নিয়ে পোঁছালাম শ্রীখোলায়। বিদেশীদের সাথে আড্ডা আর ঝর্ণার শব্দে রাত কাটিয়ে সকালে শেষ করলাম ট্রেক রিম্বিকে এসে ।
এসব কোনটাই আমাদের স্বাভাবিক জীবনের কোনদিনের সাথে মিলে না । মানেভঞ্জনের রাত থেকে রিম্বিক আমাদের ট্রেকের ৫দিন আমাদের সারা জীবন মনে থাকবে আর হয়তো সেই টানে আবার ফিরে যাব সান্দাকফু - ফালুটে ।
আমি ইন্টারনেট থেকে একটা ম্যাপ পেয়েছিলা যা আমাদের অনেক কাজে লেগেছিল । আমি সেই ম্যাপ আমাদের ট্রেকের পথটাও এঁকেছি ।
77147_453447336485_535276485_6034005_7398138_n

ঢাকা থেকে প্রস্তুতি সেরে ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা

২০১০ এর অফিস টিম পার্টি তে এবার ঠিক হল আমরা দার্জিলিং এ যাব । আমাদের এই সিঙ্গালিলা ট্রেকিং এর আরেক সদস্য ওয়াহিদ ভাই সাথে সাথে প্রোগ্রাম করলো যাবে অন্নপূর্ণা বেস কাম্পে ১০ দিনের জন্য । ওয়াহিদ ভাই এর আগেও এরকম প্লান করেছিলেন অন্নপূর্ণাকে নিয়ে কিন্তু সফল হননি । আমারদের ট্রেকিং এর আরেক সদস্য  সালেহীন অন্নপূর্ণার ট্রেকে রাজি ছিল । আমিও শুনে রাজি হয়ে গেলাম । আমরা যাচ্ছিলাম নভেম্বরের ৮-৯ তারিখে এবং ১৬তারিখে ঈদ ছিল। তাই দশ দিন এর ট্রেকিং আর টিম পার্টি একসাথে করা আবার ঈদ এর আগেই ফিরে ঢাকায়  আসা সবকিছু কঠিন হয়ে যায় । তাই আমরা কম দিনের ট্রেকিং এর জায়গা খুজছিলাম যা দার্জিলিং  এর কাছে হয় । সালেহীন “ লোনলি প্লানেট” এ ৫ দিন এর ট্রেকিং এর কথা বলল । আমার কাছে জায়গাটা একেবারেই নতুন কিন্তু ৫ দিনের ট্রেক ছিল যা আমাদের সময় অনুসারে যায় । আমি ছবি দেখে রাজি হয়ে গেলাম । আমি আর সালেহীন যাচ্ছি একেবারে ঠিক ছিল । ট্রেকিং যেই রোড এ করবো সেই রোডে জিপে করে যাওয়া যায়  সেজন্য  ওয়াহিদ ভাই ভাবলো এটা ভালো ট্রেকিং এর জায়গা না । ওয়াহিদ ভাই আগে অনেক ট্রেক করেছে আর অন্নপূর্ণা বেস কাম্প প্লান থেকে সড়ে  জিপ এর রোড এ ট্রেক করতে উনি রাজি হলেন না। ওয়াহিদ ভাই অন্য জায়গা খুজছিল আর আমি এবং সালেহীন ট্রেক এর সব প্লান করছিলাম । আমরা “ লোনলি প্লানেট” এর প্লান অনুসারে ট্রেক করার কথা ভাবছিলাম যা অনুসারে আমরা প্রথমে শিলিগুড়ি থেকে  মানেভঞ্জন যাব এবং ট্রেক শেষ করে যাব দার্জিলিং । ইন্ডিয়ান ভিসার ঝামেলার জন্য আমারদের টিম পার্টির তারিখ ১০ নভেম্বর এ ঠিক হল। আমরা ঠিক করলাম আমরা ৪ তারিখে ইন্ডিয়া যাব এবং ৫ তারিখ থেকে ট্রেক করে ১০তারিখ এ টিম পার্টিতে যোগ দিব । আমি এবং সালেহীন একসাথে ভিসা পেয়ে গেলাম আর আমাদের কাছে এখন ট্রেক এর প্লান করা ছাড়া সব ঠিক ছিল  কিন্তু মনে মনে চাচ্ছিলাম ওয়াহিদ ভাই আমাদের সাথে যোগ দিবে । ওয়াহিদ ভাই এরও ভিসা হয়ে গেল। ৫ দিন বাকি কিন্তু ওয়াহিদ ভাই ভালো কোন জায়গা পেলনা তাই শেষমেশ আমাদের সাথে ট্রেক করতে রাজি হল । ৩ জন আমি সালেহিন আর ওয়াহিদ ভাই শ্যামলী পরিবহনে  ইন্ডিয়ার টিকেট বুক করলাম ।
আমি ট্রেকিং এর কিছু ম্যাপ জোগাড় করলাম আর ভালো কিছু ব্লগ এর হেল্প পেলাম  । এর আগে আমি তাদের সাথে ২০১০ এর প্রথম দিকে কেওকারাডং এ গেছিলাম শুধু একটা চাদর নিয়ে আর সেটাই আমার প্রথম ট্রেক করা । কিন্তু সালেহিন এবং ওয়াহিদ ভাই অনেক ট্রেক করেছে এর আগে । কি কি জিনিস সাথে নিব আর ওজন কত হলে হাঁটতে পারব তাও জানি না । আমি  আন্ডারওয়েট তাই বেশি ওজন নিতে ভয় পাচ্ছিলাম । ক্যামেরা নিলাম এবং ৫ দিনের জন্য ৩ সেট বাটারি নিলাম । একটা ব্লগ (http://eranajoy.blogspot.com/) এ  পড়লাম কি জিনিস লাগবে । অনেক ঠান্ডা বাতাসের জন্য  উইন্ড চিটার জ্যাকেট লাগবে কিন্তু  আমার ছিল না , রেইন কোট সব সিজন এ লাগবে তাই নিলাম যদিও জানতাম নভেম্বর এ বৃষ্টি হবে না ।  দুইটা জ্যাকেট নিয়ে দেখলাম ওজন অনেক বেড়ে যায় তাই একটা পাতলা জ্যাকেট নিলাম। ওজন কমাতে রেইন কোটটা রেখে দিতে পারতাম কিন্তু ভাবলাম অনেক ঠাণ্ডাতে রেইন কোট পড়ে নিব ।ট্রেকের সবচেয়ে গুরুত্ব জিনিস হল পায়ের জুতা।   আমার জুতাটা একেবারে নরমাল ছিল যা এরকম ট্রেকিং করার জন্য উপযোগী না । ওয়াহিদ ভাই ভালো কুয়ালিটির ট্রেকারস বুট পরেছিল কিন্তু সেটা বাংলাদেশ থেকে কিনা না ।
IMG_1713
ওয়াহিদ ভাই বলেছিল বেশি গরম কাপড় না নিতে আর আমরা একটা কাপড়ের উপরে আরেকটা ওভারলেপ করে পরলে কাজ চলে যাবে । তাই একটাই পাতলা জ্যাকেট নিয়েছিলাম এবং একটা সোয়েটার, এই আমার গরম কাপড় ।   অনেক কমিয়েই ওজন  ৬ কেজির মত ছিল আর  কাঁধে নিয়ে কষ্ট হচ্ছিল না। আমার বাসার সামনে ছিল কল্যাণপুর  বাসস্টান্ড তাই কাঁধে ব্যাগ নিয়ে রওনা দিলাম হাঁটতে হাঁটতে । বাস স্টান্ড এ গিয়ে বারবার ব্যাগ চেক করছিলাম  আর ভাবছিলাম বেশি কিছু নিলাম কিনা কিন্তু পাঁচদিন চলার জন্য কম করেই নিয়েছিলাম । বাসস্টান্ড এ ১ ঘন্টার মত অপেক্ষার পরে বাস আসল আর বাসের মধ্যে ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন ছিল । আমার ব্যাগ সাথে তাদের ব্যাগের ওজন তুলনা করে দেখলাম আমার ব্যাগটা হাল্কা , এবার একটু নিশ্চিত হলাম । রাতে কুমিল্লার এক হোটেলে থেমে রাতে খেয়ে নিলাম । হোটেলের কাছেই  অনেক ঠাণ্ডা ছিল তখন ভাবছিলাম আমি মাত্র একটা পাতলা জাকেট নিয়ে সান্দাকফুতে বেঁচে থাকতে পাড়বো কিনা ।

চেঙরাবান্দা থেকে মানেবাঞ্জান

আমরা সকালে পৌঁছলাম চেঙরাবান্দাতে  প্রায় সকাল ৬:৩০ এ কিন্তু বর্ডার খুলবে সকাল ৯টায় । সেখানে  নাস্তা  সেরে বর্ডার খোলার জন্য অপেক্ষা করছিলাম । একজন বলল বর্ডারের কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে তাই আমারা সবাই গেলাম প্রথম  কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে বর্ডারের কাছে ।
IMG_1538
সকাল ৭:৩০মি
আকাশ অনেক পরিস্কার থাকলেই এতো দূর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভালো দেখা যায়। তারপরে ১০ টার দিকে শিলিগুরির দিকে বাসে করে রওনা দিলাম । সারা রাস্তা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে যেতে যেতে কেটে গেল।
IMG_1557
দুপুর ১২:০০মি
দুপুর প্রায় ১ টার দিকে শিলিগুরি পৌঁছে বাসের ফেরার টিকেটের তারিখ ঠিক করলাম আর সাথে সাথে মানেভঞ্জন যাবার জিপ ঠিক করলাম কিন্তু সেটা আবার দার্জিলিং এ গিয়ে পরে গুম হয়ে মানেভঞ্জন যাবে । তাই প্রায় ১৮০০ রুপী দিয়ে প্রাইভেট কার বুক করলাম সরাসরি মানেভঞ্জন যাবার জন্য। প্রাইভেট কার এ করে যেতে ভালই লাগছিল । মিরিকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম , যেতে যেতে আমরা ভাবছিলাম এভাবে প্রতিবছর আসা যায় কয়েকদিনের জন্য। পাহাড়ের পাশ দিয়ে রাস্তা অনেক সুন্দর ছিল , নেপালের পাহাড় দেখা যাচ্ছিল  । আমাদের ড্রাইভারের হিন্দি বুঝার মত ছিল না কিন্তু উনি আমাদের আশে পাশের এলাকার কথা বলতে বলতে চালাচ্ছিলেন । আমরা এতক্ষন ঠান্ডার টের পাইনি কিন্তু সুখিয়াপুখারির কাছে আস্তে আস্তে  ঠান্ডা কাকে বলে বুঝা শুরু করলাম । সেখানে পুকুরকে বলে “পুখারি” ।  ড্রাইভারকে  অনুরোধ করলাম কারটা একটু থামাতে আর আমরা গরম কাপড় বাহির করি কিন্তু ড্রাইভার থামাতে মটেও রাজি হল না আর আমরা সবাই কাপ্তে কাপ্তে ৪ঃ৪৫মি এর সময় মানেভঞ্জন পোঁছালাম।

মানেভঞ্জন এ ট্রেক এর আগের রাত

মানেভঞ্জন দার্জিলিং থেকে ২৮কিমি দূরের একটি ছোট গ্রাম যার উচ্চতা ২১৫০মি । সিঙ্গালিলার পথ এখান থেকে শুরু হয় আর এখানের মানুষের আয়ের প্রধান অংশ বিদেশী ট্রেকারের উপরে নির্ভর । গ্রামটা একেবারে নেপাল আর ভারতের বর্ডারে আর সেখানে থেকে নেপালে ঢোকা একেবারেই কোন ব্যাপার না । জায়গাটা অনেক ঠাণ্ডা ছিল, তাই  আমরা নামার সাথে সাথে জ্যাকেট পরে নিলাম । তার পরে গেলাম হোটেল খুঁজতে । একটু যেতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা হোটেল পেলাম । একটা রুম ছিল, ২৫০ রুপীতে নিয়ে নিলাম ।
টুরিস্ট অফিস কাছেই ছিল তাই আমরা সাথে সাথে গেলাম আগামী দিনের জন্য গাইড খুঁজতে । হিন্দি আমাদের মধ্যে আমিই একা ভালো জানি, তাই আমাকে ঠেলে দিল কথা বলার জন্য ।
DSC01646
আমাদের ট্রেক এর কথা বললাম , লোনলি প্লানেট এর মতে টংলু তে থামার কথা ছিল রাতে, কিন্তু অফিসের লোক আমাদের টুম্বলিং এ থাকার কথা  বলল । আর গাইডের জন্য প্রতিজনকে ৩৫০ রুপী দিতে হবে । আমরা রাজি হলে গেলাম আর আমি সবার জন্য টুরিস্ট অফিসের খাতাতে নাম লিখছিলাম । আমি এতক্ষন হিন্দিতে কথা বলছিলাম কিন্তু যখন খাতাতে দেখল আমরা আসলে বাংলাদেশ থেকে এসেছি তখন সে বলল আসলে ফরেনারদের জন্য ৬০০ রুপী আর রেজিস্টার গাইড থাকে । কি আর করা, ৬০০ রুপী করেই দিতে হল আমাদেরকে । আমরা যেহেতু ফরেনার, সেকারনে আমাদের রেজিস্টার এ এন্ট্রি দেখাতে হবে । সে জন্য আমারা  ওখানের ইমিগ্রেশন চেক পোস্টে গেলাম । ওখানে অফিসার ছিলেন যিনি, তিনি আবার কলকাতার লোক । আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি আর বাংলায় কথা বলার লোক পেয়ে অনেক খুশী ।  উনি আমাদের প্রথম দীপাবলীর অভিনন্দন দিলেন । সেদিন ছিল দীপাবলীর রাত আর সেদিন আমরা মানেভঞ্জন এ রাত কাটাবো । আমরা চেক পোস্ট থেকে বেরিয়ে গ্রাম এর মাঝে একটা সুন্দর মন্দির দেখতে গেলাম । আমাদের দেখে ওখানের পুজারি প্রসাদ দিল । আমরা না করতে পারলাম না । সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল আর মন্দিরের একপাশে ওখানের ছোট ছেলেরা অনেক ধরনের আতসবাজি ফুটাচ্ছিল ।
DSC01657
আমাদের দেখে ওরা আরও উৎসাহ  পেল আর আমাদের একের পরে এক ভালো ভালো আতসবাজি ফুতিয়ে দেখাল ।
DSC01660
আমরা ২০-৩০ মিনিট ধরে ওদের আতসবাজি ফুটানো দেখছিলাম । ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন নেপালে গিয়েছিল আর ওখানের খাবার নাম জানা তাদের । আমি মোমোর কথা শুধু শুনেছিলাম আরে সেখানেই প্রথম খেলাম । আমরা যেই হোটেলে থাকছিলাম তাদের নিচের তলায় খাবারের দোকান আছে আর আমরা ওখানে মোমো খেলাম আর সেই সাথে রাতের খাবারের অর্ডার দিয়ে চলে আসলাম । সেখানের চা ভালো ছিল আর চায়ের মগগুলো  সুন্দর নকশা করা।
DSC01669
আমরা আগামী দিনের ট্রেকের জন্য চকলেট বিস্কুট কিনতে বের হলাম আর একটু হাঁটলাম আশেপাশে। গ্রামটা আসলে ছোট ছিল আর অনেক ঠান্ডা ছিল তাই বাইরে বেশিক্ষণ ঘুরতে পারলাম না । আমরা থুকপা আর মোমো অর্ডার দিয়েছিলাম ।
DSC01676
আমাদের দেখে ওখানের এক ছেলে আমাদের সাথে কথা বলা  শুরু করল । সে একটু বেশি খেয়ে ছিল । তাকে বসতে দিলাম আর সে আমাদের সাথে আলাপ চালাতে থাকল । সে দার্জিলিং এ কলেজ এ পড়ে আর একজন গোর্খা  । সে আমাদেরকে গোর্খা  রেজিমেন্টের কথা , গোর্খাদের সাহসের বিভিন্ন কথা বলতে থাকলো । তাদেরকে কিভাবে অবহেলা করা হচ্ছে  আর দার্জিলিং পশ্চিম বাংলা সরকার এর অধীনে  না হয়ে আলাদা স্বায়ত্ব শাসিত প্রদেশ করার জন্য ওদের আন্দোলনের কথা বলল । সে আমাদের সাথে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংলিশে কথা বলতে থাকল । সে আমাদের সাথে মাতাল অবস্থায় অনেক্ষন ধরে কথা বলছিল দেখে শেষে হোটেলের লোকরা তাকে নিয়ে একটু বিরক্ত হয়ে গেল । আমাদের ঘুমানোর সময় হয়ে গিয়েছিল তাই বেশীক্ষণ সেখানে না থেকে আমরা আমাদের দোতালায় রুমে গেলাম। আমরা দোতালায়  উঠার সময়  হোটেলের এক ছেলে জানিয়ে দিল আমারা যেন বাইরের দরজা খোলা না রাখি । সেই ছেলেটা আমাদের রুমে এসেও জালাতে পারে আর এর আগেও সে এটা করেছে । আমারা যেখানে ছিলাম সেটা ছিল একটা মোড় আর মানেভঞ্জনের কেন্দ্র তাই সবাই এসে সেখানেই আতসবাজি করছিল । আমরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাদের আতসবাজি দেখছিলাম। যখন আতসবাজি হচ্ছিল তখন গ্রামটাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছিল ।
DSC01678
আমরা এই আতসবাজির আওয়াজে  কিভাবে ঘুমাব এটা নিয়ে ভাবছিলাম । এতো  ঠাণ্ডা ছিল যে আমরা হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বেশিক্ষণ আতসবাজি দেখতে পারলাম না । এরপরে শুরু হল আসল যুদ্ধ , ঘুমানোর আগে টয়লেটে যাবার । টয়লেট ভালই ছিল আর এরকম না যে একটা মাত্র টয়লেট যে কে আগে যাবে তা নিয়ে যুদ্ধ । যুদ্ধ  ছিল টয়লেট শেষ করে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করার । মনে হচ্ছিল যেন হাতটা বরফ হয়ে গেছে । কিছু করার উপায় নাই , আর ঘুমানোর উপায় নাই কারন আজ দীপাবলীর রাত আর সবাই সারা রাত আতসবাজি করছে আমাদের হোটেলের সামনে ।
DSC01679
বেড ছিল দুইটা , একটাতে  ওয়াহিদ ভাই নাক দেকে ঘুম দিল আর আরকটাতে  আমি এবং সালেহীন এক বিছানায় শুয়ে ছিলাম একসাথে আবার কম্বল টাও একটা আর ছোট । তাই ভাল করে পাশ হয়ে শোবার উপায় ছিল না । আমি ১ ঘন্টা জেগে থেকে কখন ঘুমিয়ে গেছি নিজেই জানি না । কিন্তু সালেহীন সকালে বলল সে ভাল করে ঘুমাতে পারেনি আর তার মাথা অনেক ধরে ছিল ।

ট্রেকিং এর প্রথম দিন ( মানেভঞ্জন থেকে টুমলিং)

আমার ঘুম ভাঙ্গল সালেহীনের ঘড়ির এলার্ম দিয়ে । আজকে আমাদের ট্রেকিং এর প্রথম দিন । আমাদের রাতে কথা ছিল আমরা সকালে ৭ টাই রেডি হবো  এবং ৭:৩০টার দিকে গাইড আসলে আমরা রওনা দিব । কিন্তু সালেহীন ভুল করে এক ঘন্টা আগেই এলার্ম দিয়েছিল  আর আমরা ৫:৩০ টাই নাস্তা করার জন্য নিচে নামলাম  । কিন্তু নিচে নাস্তা করতে  গিয়ে বুঝলাম আসলে আমরা ১ ঘন্টা আগে উঠেছি সালেহীনের কারণে আর দোকানপাটও তখন খুলেনি সেখানে। আমরা ঠিক করলাম এই ঠাণ্ডার মধ্যে  আমাদেরকে এক ঘণ্টা আগে জাগানোর জন্য সালেহীনকে পাহাড় থেকে ফেলে দিব । কিন্তু একটা কারনে সালেহীনকে ধন্যবাদ দিতে যে তার জন্য আমরা ভরে সূর্যোদয় এর পরে লালচে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পায় মানেভঞ্জন থেকে । অনেক সুন্দর লাগছিল পাহাড়ের গা ঘেসে কাঞ্চনজঙ্ঘার চুড়া ।
IMG_1600
IMG_1603
আমরা ছবি তুলে ফিরছিলাম সেই সময় সেই বাঙালি বাবুর সাথে দেখা । উনি আমাদের সাথে চা খেয়ে আমাদেরকে তার সাথে হাঁটার প্রস্তাব দিলেন । অনেকদিন পরে বাঙ্গালী লোক পেয়ে উনি অনেক আনন্দিত । আমরা উনার সাথে হাঁটা ধরলাম  আর উনি হাঁটার সাথে সাথে গল্প জুড়ে দিলেন । আমরা ৩০মিনিট এর মত উনার সাথে হেঁটে আবার হোটেলের কাছে চলে আসলাম নাস্তার জন্য । আমরা সকালের নাস্তা করছিলাম এ সময় আমাদের গাইড চলে আসল । আমরা উনার সাথে কথা বললাম এবং মনে হল অনেক অমায়িক ভদ্র ।  আমরা নাস্তা শেষে প্রায় ৭:৩০ এ রওনা দিলাম হাঁটতে । আমাদের প্রথমে যেতে হবে  ন্যাশনাল পার্কের অফিসে টিকিটের জন্য । আমরা ওখানে এন্ট্রি দিয়ে এবং পার্কের  টিকেট নিয়ে উপরের দিকে হাঁটা শুরু করলাম ।
IMG_1615
প্রথম দিন আমাদের ট্রেক এর রাস্তা ছিল ১২ কিলোমিটার কিন্তু উঠতে হবে উপরের দিকে । আমরা ২১৫০ মি  থেকে ৩০৭০ মি উপরে উঠবো প্রথম দিন । আমার উঠতে কোন কষ্ট হচ্ছিলনা কারন আমার কাঁধে ৫-৬কেজির জিনিশ ছিল । কিন্তু সালেহীন একটু হেঁটেই অনেক পিছিয়ে গেল কারণ  সালেহীন বেশি জিনিস নিয়ে এসেছিল । আমি গাইড এর   সাথে সাথে উঠছিলাম । আকাশ অনেক পরিস্কার ছিল, গাইড বলল আমরা বেস্ট সময়ে এসেছি ট্রেক করতে । গাইড জানতে চাইল আমাদের কারো পায়ে ব্যাথা আছে কিনা এবং আমি সাথে সাথে বলাম না আর একটু আগেই আমরা বাঙ্গালী বাবুর সাথে ওয়ার্ম  আপ করে এসেছি। সে বলল গতকাল সে নিউজিলান্ডের একদলকে সান্দাকফু থেকে মানেভঞ্জন একদিনের মধ্যে নিয়ে এসেছে আর আজকে আবার আমাদের নিয়ে যাচ্ছে তাই তার হটুতে ব্যাথা হচ্ছে । কে শুনে ওর  কথা আমরা আমদের প্লান মত হাঁটবো। আমাদের গাইডের নাম চিরিং সেরপা ।
আমরা প্রায় ১ কিমি হেঁটে একটা জায়গায় থামলাম । আমরা একটা প্রাচীরের এপার থাকে দূরের পাহাড়ের উপরে বাড়ি দেখতে পারছিলাম এবং আরেক পাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছিল । গাইড আমাদের বলল এই রাস্তার প্রচীরের ওপাশটা নেপাল । মাঝে মাঝে ইন্ডিয়ান পুলিশ আসা যাওয়া করে  আর কিছু না । একটা রোড দিয়ে নেপাল আর ভারত ভাগ করা আর সেখানে দিয়ে দুই দেশের লোকই যায়। গাইড আমাকে বলল টুম্বলিং এ থাকার কথা,  তার ভাই আর ভাবি আছে ওখানে । সে আমাদের এক জায়গায় থেমে কাঞ্চনজঙ্ঘা , কুম্ভকর্ণ আর অন্য সব পাহাড় চিনাল ।
IMG_1617
দুই কিমি হেঁটে আমরা পোঁছালাম চিত্রে মঠে উচ্চতা ২৫৩০ মি । একটা বড় স্তুপা ছিল সেখানে । গাইড তাদের প্রার্থনা ঘরটা খুলে দেবার ব্যবস্থা করে দিল। ভিতরে অনেক মূর্তি ছিল যার মধ্যে কিছু বুদ্ধের আর তারা দেীরর আর বাকিগুলো ওয়াহিদ ভাই অনেক ভাল চিনে । IMG_1622
IMG_1631
IMG_1634
IMG_1646
এক পরিবার প্রার্থনা করার জন্য আসল সেখানে আর আমরা সেখানে কিছু দান করে বেরিয়ে আসলাম । মঠটা অনেক সুন্দর আর সেখানে আমরা ২০ মিনিটের মত কাটালাম। আমরা ট্রেক করতে এসেছি তাই ওখানে বেশিক্ষন থাকলাম না আর হাঁটা দিলাম উপরের দিকে । আমাদের গাইডের কাছে জানতে চেলাম আমাদের ট্রেকের পথের কথা । সে এরপরে আমাদের নিয়ে যাবে  মেঘমা যেখানে চেক পয়েন্ট আছে এবং তার পরে টংলু  না নিয়ে গুরাসাই দিয়ে টুম্বলিং এ নিয়ে যাবে । আমাদের সেদিনের সর্বাধিক উচ্চতা ছিল টংলু তে ৩০৭০মি । আমরা গাইডকে রাজি করালাম সেখানে যাবার জন্য । সে রাজি হল  এবং আমাদের বলল আমরা টংলুতে দুপুরের খাওয়া খেয়ে নিব । চিত্রের মঠ থেকে একটু আগিয়ে গাইড আবার আমাদের একটা দোকানে চা খাবার জন্য থামতে বলল ।
DSC01764
ওখানে আমরা ১০মিনিট ছিলাম । ওখানের পাহাড়ি মুরগি দেখে ওয়াহিদ ভাই তাদের রানের দিকে তাকিয়ে রোস্ট খাবার চিন্তা করছিল । সেখানে একটা কুকুর দেখলাম যা অস্বাভাবিক ভয়াবহ অনেকটা  কালো বাঘের মত বলা যায় ।
DSC01761
আমরা আস্তে আস্তে উপরে দিকে যাচ্ছিলাম । লামায়ধুরা তে সালেহীন ৫ মিনিটের রেস্ট নিল আর কোল্ড ড্রিংস পান করল। সালেহীনের কাঁধের বোঝার জন্য সে ক্লান্ত ছিল আর আমরা প্রথম দিন ১২ কিলোমিটার হাঁটব তাই তেমন তাড়াহুড়াও ছিল না । আমরা রেস্ট শেষে মেঘমা মঠের দিকে রওনা দিলাম । আমার ম্যাপটা  ভালই কাজে দিচ্ছিল । ৩.৫০ কিমি মত হেঁটে আমরা মেঘমাতে পোঁছালাম । মেঘমার মঠটা চিত্রের মত সুন্দর ছিল না । আমরা গাইডকে আমাদের সাঙ্গালিলা পার্কের টিকেট দিলাম আর সেখানে এন্ট্রি দিলাম ।
IMG_1670
মেঘমাতে একটা  আর্মি ক্যাম্প  ছিল যেখানে ছবি তুলা নিষেধ । সেখানে একটা লজ আছে আর নিচে খাবার দোকান ছিল সেখানে চা বিস্কুট আরও অন্য খাওয়া পাওয়া যায়।
DSC01792
সেখানে থেকে টংলু যাবার রাস্তা দেখে একটু ভয় লাগে। ৬০ ডিগ্রী উচা মনে হচ্ছিল ।
IMG_1673
আমরা এতক্ষণ যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম সে রাস্তা দিয়ে জিপ যায় আর আমরা ৪-৫ টা জিপ যেতে আসতে  দেখেছি । এই প্রথম আমরা ১ কিলোমিটার উপরে উঠবো যে রাস্তা এত খাঁড়া আর সরু যে এ রাস্তায় পায়ে হেঁটে ছাড়া যাবার কোন উপায় নাই। আমি একটু উঠে  বুঝতে পারলাম অনেক খাঁড়া রাস্তা । কিছু কিছু জায়গা সিঁড়ির মত খাঁজ করা  আবার কিছু পথ খাঁজ ছাড়া  কিন্তু পাকা রাস্তা আর আমি অনেক সাধারন জুতা পরে উঠছিলাম সেকারনে আমার পায়ে অনেক চাপ পরছিল । মাঝে মাঝে একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম কিন্তু বেশিক্ষণ রেস্ট নিলে আবার হাঁটতে পারবো না পরে, তাই পায়ের উপরে জোর দিয়ে উঠছিলাম । আমার কাঁধের বোঝা অনেক ভারী মনে হচ্ছিল আর আমি সালেহীনের কথা চিন্তা করছিলাম সে কিভাবে উঠছে কারণ সে আগে থেকেই ক্লান্ত ছিল । কিন্তু সালেহীন অনেকবার বাংলাদেশে ট্রেক করেছে আর সে আমার চেয়ে অনেক ভাল  জানে এসব পথে কেমন করে হাঁটতে হয় । অনেকটু উপরে উঠে পেলাম পাথরের রাস্তা ।  আমি ডান পায়ে বেশি জোর দিয়ে হাটি আর পাকা রাস্তার সজা উঠার সময় ডান পায়ে ব্যাথা পেলাম । তারপরে আমার হাঁটার গতি কমিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে উঠে গেলাম উপরে । মেঘমার উচ্চতা  ২৬০০মি আর টংলুর উচ্চতা  ৩০৭০মি । সারা ট্রেকে আমি প্রথম এরকম খাঁড়া উপরে উঠেছি আর এটাই আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল । আমি উঠে আমার কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে বসলাম আর সেখান থেকে গাইড আমাকে  দার্জিলিং দেখাল ।
IMG_1675
IMG_1679
দার্জিলিং সেখান থেকে অনেক সুন্দর দেখায় । আমি ছবি তুলছিলাম আর অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরে ওয়াহিদ ভাই আসল । শেষে সালেহীন এসে উঠল আর  আস্তে আস্তে আমরা উঠে খাবার জন্য এক বাড়ির কাছে  গেলাম । অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম আর ক্লান্তি দূর করার জন্য গ্লুকন - ডি পান করলাম আমি এবং সালেহীন। এখানে বেশ মোটা তাজা পাহাড়ি মুরগী ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর ওয়াহিদ ভায়ের নজর সেখানেই ছিল  , একটা কাল বড় মুরগী টারগেটে ছিল ।  আমরা ওয়াহিদ ভায়ের সখ সেখানে পুরন করলাম । মুরগি আর ভাত ১২০ রুপী ছিল কিন্তু ওয়াহিদ ভাই এরকম মুরগী দেখে সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল। কিন্তু তারা সেটাকে না কেটে একটু কম মোটা একটাকে কাটল । আমরা অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরে আমাদের খাবার রান্না হয়ে গেল । আমরা অনেক ক্ষিধা লেগেছিল আর যা দিয়েছিল সব চেটে পুটে খেলাম সবাই ।
DSC01799
পেট ভরা ছিল আর আমরা দাঁত খিলাল করতে করতে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছিলাম । খাবার পরে আমরা আলাপ করছিলাম আসলে কি আমরা ট্রেক করতে এসেছি না পার্টিতে এসেছি এখানে । ঠিক হল আমরা আর  এরকম খাবার খাব না আর  দুপুরে হাল্কা খাবার খাব যাতে ভাল করে পরে হাঁটা যায় । টংলু থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা সুন্দর দেখায় । আমার কাঞ্চনজঙ্ঘার চেয়ে কুম্ভকর্ণ ভাল লাগছিল ।
IMG_1709
IMG_1693
আমরা খাবার কিছুক্ষণ পরে রওনা দিলাম টুম্বলিং এর দিকে । টুম্বলিং এর উচ্চতা ২৯০০ মি  আর টংলু থেকে ১কিমি দূরে।  আমাদেরকে প্রথম নিচের দিকে নামতে হবে কিন্তু তেমন নিচে না । এবার দেখি সালেহীনের গতি বেড়ে গেছে কিন্তু আমি হাঁটতে পারছিনা । টংলুতে  উঠার পরে আমার পায়ের এমন অবস্থা যে নিচের দিকে ডান পা ফেললেই প্রচণ্ড ব্যাথা করে। আমি আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করলাম । এভানে হাঁটতে হাঁটতে আমার পায়ের ব্যাথা কমতে থাকল  আর আমি গতি বাড়ালাম ওয়াহিদ ভাইকে ধরার জন্য । আমি বুঝলাম যে  এটা টংলুতে উঠতে গিয়ে যে ব্যাথা লেগেছিল তার ফল। কেবল ট্রেক শুরু আর পায়ে এরকম ব্যাথা । আগামী দিনের চিন্তায় ছিলাম যে বাকি ট্রেক কিভাবে  করব । পায়ের ব্যাথা নিয়ে টুম্বলিং এ পোঁছালাম । লজের কাছের রাস্তা সমান ছিল আর  সমান রাস্তায় হাঁটতে আমার ব্যাথা হচ্ছিলনা ।

টুম্বলিংএ রাত কাটানো

আমি ছিলাম সবার শেষে আর আমরা প্রায় ৩:৩০ মি টে পোঁছালাম টুম্বলিঙ্গের লজে । আমি সামনে এগিয়ে গেলাম “সিদ্ধার্থ” লজে আর লজের দোতালায় উঠলাম ।
DSC01801
লজটা অনেক সুন্দর ছিল আর গোছান রুম । আমাদের গাইডকে আগে থেকে বলে রেখেছিলাম যে আমরা সেখানে গোসল করব কারণ আমরা ভারত যাওয়ার পরে আর  গোসল করিনি । মজার বেপার ছিল লজটা ভারতে না আসলে তা নেপালে। আমরা ভারতে ট্রেক করছি্লাম কিন্তু থাকার জন্য সেদিন নেপালে ছিলাম। গরম পানি আসল আর সালেহীন প্রথমে গেল গোসল করতে। ৪টার মতো বাজে তখন । ওয়াহিদ ভাই আর আমি হোটেলের সামনে একটা বসার জায়গা ছিল সেখানে গিয়ে বসলাম । সেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা অনেক সুন্দর দেখায়। আমি আর ওয়াহিদ ভাই সেখানে অনেকক্ষণ সময় কাটালাম । তখনও সন্ধ্যা হয়নি আর কাঞ্চনজঙ্ঘা হলুদ হয়েছিল। আমি হোটেলে গেলাম গোসল করতে । পানি গরম ছিল কিন্তু ঠাণ্ডাও ছিল সেরকম। আমার পরে ওয়াহিদ ভাই ঢুকল । সেখানে আমাদেরকে দীপাবলীর মিঠাই খেতে দিল। শক্ত মিঠাই দাঁত দিয়ে ভাঙ্গা কঠিন , জিলাপির মত কিন্তু মিষ্টি ছিল না তেমন । আমি আর সালেহীন লজের বারান্দায় আসলাম। সেখান থেকে গুরাসাই এর রাস্তা দেখা যায় । গাইড আমাদের টংলু না নিয়ে গুরাসাই এর রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসতে চেয়েছিল । লজে একটা কলকাতার ছেলের সাথে দেখা হল , সে কলেজ এ পড়ে আর লজের পরিবারের সাথে অনেক পরিচিত । সে সান্দাকফু অনেকবার গেছে আর সময় পেলে একাই হাঁটতে চলে আসে । তখন দিন অনেক বাকি তাই  সে আমাদের বলল জউবারি নামে নেপালের গ্রাম আছে সেখান থেকে আজকে ঘুরে আসতে । কিন্তু গাইড বলল সে আমাদের আগামী কালকে সেখান দিয়ে নিয়ে যাবে । ওয়াহিদ ভায়ের গোসল  শেষ হল আর সূর্যাস্তের সময়  হয়ে এসেছিল । আমরা বাহির হলাম সূর্যাস্ত দেখার জন্য আর  লজের পিছনের দিকে চূড়ার দিকে গেলাম । একেবারে উপরে অনেক ঠাণ্ডা বাতাস ছিল তাই আমরা একটু নিচে বসে ছবি তুলছিলাম । আমাদের উপরে চূড়ায়  কিছু ফ্রঞ্চ লোক নন স্টপ কথা বলছিল।
আমরা যেই পথে আগামি দিন ট্রেক করব তা মেঘে ঢেকে গেছে । গাইড বলল আমরা আগামি সকালে সূর্যোদয় এর সময় দেখতে পাব।
IMG_1733
কাঞ্চনজঙ্ঘার নিচের দিকে মেঘ এসে জমা হচ্চিল ।  আস্তে আস্তে কাঞ্চনজঙ্ঘার নিচের পাহাড় গুলো মেঘে ঢেকে গেল আর কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া সূর্যাস্ত এর সময় লালচে দেখাচ্ছিল।
IMG_1751
IMG_1756
আমরা অনেকক্ষণ কাটালাম সেখানে এবং সেদিন আমাদের আর কিছু করার ছিল না । অনেক ঠাণ্ডা ছিল যা কিন্তু আমরা একটার উপরে আরেকটা অভারলাপ কাপড়  করে পরেছিলাম । সেখান থেকে লজ ফিরলাম সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না , জায়গাটা নেপালে আর সেখানে কেবল বিদ্যুৎ খাম্বা লাগান আছে কিন্তু বিদ্যুৎ এখনও আসিনি। মোমবাতি জ্বালিয়ে  আমরা রুমের মাঝের বসার ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আমরা সিক্কিমে ট্রেক করার কথা বলেছিলাম গাইডকে, সে আমাদের সেখানের ম্যাপ আর সেখানের ট্রেক এর কথা বলছিল। আমরা পরের বছরে সেখানে ১০ দিনের ট্রেক করার চিন্তা করছিলাম। বাংলাদেশীদের জন্য সেখানে যাবার অনুমতির ঝামেলা আছে যা আমরা দার্জিলিং  এ গিয়েও জানতে পায় । গাইড বলল সে সেটা দেখবে। আমাদের পাশের রুমে আইসল্যান্ড থেকে দুই মহিলা এসেছিল । ঠাণ্ডা অনেক বেড়ে গেল তাই আমরা খাবার অর্ডার দিয়ে লেপের ভিতরে ঢুকে গেলাম । ৮ঃ৩০ -৯ টার সময় আমরা খেতে গেলাম, ছিল ভাত আর সবজি । সেখানের লোকরা খাবার সাথে মরিচের একধরনের আচার দেয় । সবজি রান্নাটা এত ভাল হয়েছিল যে আমরা ভরপেট খেয়ে উঠলাম।  সেদিন আমাদের দিনটা অনেক ভাল কেটেছিল আর মনে হচ্ছিল আমরা ট্রেক করতে না ঘুরতে এসেছি । ১২ কিমি হাটা , থেমে থেমে কোল্ড ড্রিঙ্কস , দুপরে পাহাড়ি মুরগী দিয়ে পেটভরা খাবার আর রাতে আবার  সাধে ভরা খাবার । সালেহীন একাউন্টের দায়িত্বে  ছিল আর সে বলল আমরা যদি এরকম ভাবে প্রতিদিন খায় তাহলে আমাদের খাবার টাকার সমস্যা হবে । আমরা আগে থেকে ঠিক করেছিলাম যে আমাদের ট্রেকের জন্য কেমন খরচ পোরতে পারে তাই আমি এবং সালেহীন ১০০ ডলার করে ভাঙ্গিয়ে ট্রেকের জন্য রওনা দিয়েছিলাম আর পরে দার্জিলিং   গিয়ে বাকি ডলার ভাঙ্গাবো বলে ঠিক করেছিলাম । শিলিগুড়ি থেকে মানেভঞ্জন এ জিপে আসার কারণে আমাদের হিসাব গরমেলে হয়ে গেছে আর সেখানে ডলার ভাঙ্গানোর কোন উপায় নাই । আমরা আগামী দিনে সকালের খাবার অর্ডার দিয়ে ঘুমাতে চলে গেলাম । বিছানাতা অনেক আরামের ছিল আর ভালই ঘুম হয়েছিল । আমি পরের দিন সালেহীনের এলার্ম শুনে উঠে গেলাম  সূর্যোদয় দেখার জন্য ।  আজকে আবার ওয়াহিদ ভায়ের মাথা ব্যাথা । আমি তৈরি হয়ে  গাইডের জন্য অপেক্ষা করছিলাম । গাইডের ভাই ( লজের মালিক ) বলল গাইড নিচে আছে । আমি নিচে গিয়ে ২ টা সুন্দর কুকুরের পাল্লায় পরলাম । গেট বন্ধ আর তারা আমার গায়ের উপরে উঠার চেষ্টা করছিল । আমি তাদের সাথে না পেড়ে আবার উঠে গেলাম দোতালায়। কিছুক্ষণ পরে গাইড এলো সাথে সালেহীন রেডি হয়ে গেল । আমরা একসাথে বেরালাম  প্রায় ৫:৩০ বাজে সেখানে । লজের পিছনের সেই আগের জায়গায় গিয়ে বসলাম । অনেক ঠাণ্ডা ছিল তাই আমি হ্যান্ড গ্লবস বেশিক্ষণ খুলে রাখতে পারছিলাম না । আমাদের আগামী দিনের ট্রেকের পথ আজকে দেখা যাচ্ছে । সূর্যোদয় তখনও শুরু হয়নি আকাশ টা গোলাপী ছিল আর কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছিল । আজকে কাঞ্চনজঙ্ঘার নিচের দিকে অনেক ছোট পাহাড়ের চূড়া দেখা যাচ্ছিল যা গতকাল সন্ধায় মেঘে ঢাকা ছিল । থ্রি সিস্টার , কুম্ভকর্ণ, কাঞ্চনজঙ্ঘা, পান্দিম অনেক সুন্দর লাগছিল । কিছুক্ষন পরে সূর্যের প্রথম আলো এসে পড়ল কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় । উপরের অংশ লালচে হয়ে উঠল। আমি কাঞ্চনজঙ্ঘার এরকম রূপ আগে কখনও  দেখিনি ।
IMG_1787
আমি সান্দকফুতে সূর্যোদয় দেখিছি কিন্তু টুম্বলিং এর সূর্যোদয়ের সময় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে অনেক সুন্দর দেখায় । সূর্যোদয় শেষ হল আর  কাঞ্চনজঙ্ঘা লালচে থেকে সাদাটে হতে লাগল  । কাঞ্চনজঙ্ঘার নিচে জমা মেঘের দল আবার আকাশে মিশে যেতে থাকল । মনে হচ্ছিল মেঘগুলো পায়রার মত সন্ধ্যা নামার সাথে  ঘরে ফিরে আসে । কাঞ্চনজঙ্ঘার নিচে তাদের বাসা আর রাতে তারা সেখানে ঘুমায় । দিন হলে আবার তারা উড়ে যায় আকাশে । সূর্যের আলো টুম্বলিং এ পরা শুরু হল আর আমরা হোটেলে চলে আসলাম । ওয়াহিদ ভাই বিছানায় ছিল । আমরা সকালের বেড টি পেলাম । আমরা আমাদের সারা ট্রেকে লজের এরকম সৌজন্যভাব আর পায়নি । আর লজের ভাড়াও তেমন বেশি না মাত্র ৫০০ রুপী। আমরা সবায় ৭:৩০ মি ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হয়ে নাস্তা করতে নিচের দিকে গেলাম । সুন্দর আয়োজন ছিল আর আমারদের পাশে ফ্রেঞ্চ লোকরা এসে বসলো ।  আমাদের সেদিন সান্দাকফুর উদ্দেশ্যে  ১৯ কিমি হাঁটতে হবে ।

টুম্বলিং থেকে সান্দাকফু

দিনটা অনেক সুন্দর ছিল । আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে নিয়ে ছবি তুলে বেরিয়ে পরলাম ।
DSC01810
গাইড আমাকে পায়ের ব্যাথার কথা জানতে চাইল, আজকে তেমন ব্যাথা করছিল না আর আমি আজকে তেমন জোরে হাঁটছিলাম না । যাবার শুরুতে  একটা সুন্দর মানিওয়াল পড়ল ।  সাথে সেই ২ টা কুকুর আসতে লাগল আমাদের পিছে ।
DSC01814
কলকাতার ছেলেটার সাথে দেখা হল সেও বাহির হয়েছে সান্দাকফু যাবে । সে অনেক দ্রুত হাঁটে আর সে যাবে  National Park এর ভিতর দিয়ে কিন্তু আমরা যাব জউবারি হয়ে ।  আমরা জউবারি গ্রামের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলাম সেখানের পাহাড়ি মুরগীগুলো দেখে ওয়াহিদ ভাইয়ের জিভে জল আসছিল । জউবারি গ্রামটা ভারতের ভিতরে ছিল না, ছিল নেপালে ।
DSC01828
আমরা নেপালের ভিতর দিয়ে হেঁটে গাইরিবাস এ ইন্ডিয়ান চেক পয়েন্টে যাব । গ্রামের মাঝখানের এক রাস্তা দিয়ে আমরা হাঁটা শুরু করলাম নিচের দিকে ।
DSC01831
নিচের দিকে নামার সময় আমি আবার পিছে পরে গেলাম কারণ একে তো আমার হাঁটুতে ব্যাথা আবার রাস্তা ছিল বড় বড় পাথরের । যখন অনেকটা নিচের দিকে গেলাম তখন হাটার গতি বাড়িয়ে গাইডের সাথে যোগ দিলাম । গাইড আমাকে সান্দাকফু তে গিয়ে রাতে খাবারে  আমরা ইয়াকের মাংস খাব কিনা জনতে চেল কারণ সান্দাকফুতে ইয়াকের মাংস পাওয়া যায়।  আমাদের কথা হয়েছিল আমরা  কম খরচ করব  তাই তাকে বললাম কথা বলে দেখতে হবে । ওয়াহিদ ভাই এর সাথে কথা বলার সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল আর সালেহীন না করল না । নিচের দিকে নামছিলাম তাই কেউ তেমন হাপাচ্ছিলাম না । আমরা ২ঃ৩০- ৩ ঘণ্টার মধ্যে পৌছালাম গাইরিবাসের (২৬২১মি) চেক পয়েন্টে । ওখানে একটু থেমে আমার ম্যাপ খুলে দেখলাম কাইয়া্কাট্টার ২ টা রাস্তা আছে । আমি গাইডকে জিজ্ঞাস করলাম কোনটা হাঁটার রাস্তা ? সে দেখাল বাঁকা রাস্তাটা হচ্ছে গাড়ির আর আরেকটা জঙ্গলে ভিতরে । আমরা সাথে সাথে জংগলের রাস্তা দিয়ে যাবার জন্য বললাম কারন আমরা গাড়ির রাস্তাতে ট্রেক করতে বিরক্ত হয়ে গেছিলাম । গাইড আমাদেরকে গাড়ির রাস্তা দিয়ে গিয়ে  হঠাৎ নিয়ে গেল জংগলের ভিতরে । জঙ্গলটা ছিল ভুতুরে গাছপালায় ঘেরা । সূর্যের আলো তেমন পরছিল না  আর জায়গাটা ঠাণ্ডা ছিল। আমি গাইডের সাথে গাছের শিকড়ের রাস্তায় উপরের দিকে উঠছিলাম  । উঠতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট অনুভব করছিলাম । আর  না পেরে মুখ দিয়ে শাঁস নেওয়া শুরু করলাম জোরে জোরে । সালেহীন আর ওয়াহিদ ভাই অনেক পিছনে ছিল আর রাস্তা এমন ভুতুরে ছিল তাদের দেখা একেবারে যাচ্ছিল না । কিন্তু মাটির রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ভাল লাগছিল । অনেক কষ্ট করে উপরে উঠে জিপ এর রাস্তাতে আসলাম আর এরই মধ্যে আমার এক বোতল পানি শেষ ।
IMG_1795
আমাদের সবার অবস্থা কাহিল । ভাবছিলাম এরকম খাঁড়া রাস্তা শেষ কিন্তু আবার একটু হেঁটে এরকম রাস্তা দিয়ে উঠতে হল। মাজার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
কাইয়াকাট্টা থেকে কালাপুখারির রাস্তাটা অনেক সুন্দর । গাইড আমাদের বলল বর্ষার সময় Rhododendron ফুল দেখা যায় । হাঁটার পথ অনেক বড় ছিল আর অনেক বৈচিত্র পেয়েছিলাম । আমি আর গাইড একসাথে যাচ্ছিলাম আর সালেহীন এবং ওয়াহিদ ভাই অনেক পিছনে ছিল । আমরা যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তা  ছিল বাঁশঝারে ঘেরা । গাইড নিচের দিকে মাঝে মাঝে তাকাছিল আর আমাকে বলল আমাদের ভাগ্য ভাল হলে আমরা লাল পান্ডা দেখতে পারব এখানে । আমি মাঝে মাঝে  ছবি তুলছিলাম  আর বাঁশ ঝারের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলাম । অনেক সুন্দর রাস্তা আর সবুজ, হলুদ, লাল পাতার গাছে ঘেরা ।
IMG_1823
IMG_1832
আকাশ ছিল পরিস্কার আর একটু একটু গরম লাগছিল । আমার  পিছন থেকে আইসলেন্ডের এক মেয়ে যে টুম্বলিং এ ছিল সে দ্রুত গতিতে হেঁটে গেল, তার পা ছিল অনেক মোটা  আর তার গাইড তার পিছনে পিছনে হাঁটছিল। তার পরে  ইস্রাইলের   এক খাট মেয়ে আর এক লম্বা ছেলে আসছিল। আমি তাদের দেখে আমার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। এদিকে ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন অনেক পিছনে ছিল । আমি কালাপখারির আগের চেক পয়েন্টে চলে আসলাম আর দেখলাম আইসলেন্ডের সেই মহিলাটা চলে গেল কোন এন্ট্রি ছাড়া । আমি আর গাইড চেক পয়েন্টে গেলাম । গাইড এন্ট্রির কথা বলল তখন সেখানের আর্মি বলল এন্ট্রি লাগবে না । আমি গাইডকে হিন্দিতে বললাম উনাদের বলতে যে ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন দুইজন পিছনে আছে তারা আমাদের সাথে তা বলতে । আমার হিন্দি বলা দেখে আর্মি জিজ্ঞাস করল আমরা কথা থেকে এসেছি ? আমি বললাম বাংলাদেশ থেকে এসেছি  । তখন আর্মি আমাকে বলল কেউ জিজ্ঞাস করলে বলবা  কোলকাতা থাকে এসেছি তখন আমার সন্মানে লাগল । আমি বললাম আমার পাসপোর্ট আছে আর আমার কলকাতায় থাকি বলার দরকার নাই। সে আমাদের এন্ট্রি ছাড়া চলে যেতে বলল । আমার কাছে পাসপোর্ট তখন ছিল না । আমি পাসপোর্ট রেখেছিলাম সালেহিনের কাছে । আমার আর হাটার জোর তেমন ছিল না আর ক্ষিধা লেগেছিল তবে প্রায় ১/২ কিমি ছিল কালাপখারি তাই দ্রুত চলে গেলাম সেখানে । কালাপখারি অর্থ কালো পুকুর যদিও সেখানের পুকুরের পানি কালো ছিল না ।  আমি সেখানের পুকুরের ছবি তুলে উপরে গিয়ে বসে পরলাম ।
IMG_1837
সেখানে একটা বাচ্চা ইয়াক দেখলাম । সেটা আমাদের প্রথম ইয়াক দর্শন ।
IMG_1851
IMG_1853
৫মিনিটের মত হয়ে গেল তখন দেখি ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন আসছে । আমরা ওখানে কিছুক্ষন বসে খাবার জন্য হোটেলে গেলাম । ভিতরে আইসলেন্ডের  সেই মহিলা বসে খাচ্ছিল আর ম্যাপ দেখছিল ।  আমাদের আরও ৬ কিমি এর মত হাঁটতে হবে তাই ভারী খাওয়া যাবে না আর থুকপা অর্দেডার দেওয়া হল । হোটেলে একটা পুতুলের মত দেখতে ছোট মেয়ে ছিল । আমি তার জন্য চকলেট বার করলাম দেবার জন্য । কিন্তু অনেকে ছিল তার ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত আর সে অনেক লজ্জা পাচ্ছিল । তাই আমি গাইডকে চক্লেট দিলাম তার মাকে দেবার জন্য যাতে পরে মেয়েটাকে দেয় ।
DSC01868
অনেক সুন্দর জায়গা। একদিকে ফাঁকা আর অনেক  দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছিল । আর ওপর দিকে উঁচা পাহাড়ি রাস্তা , আমাদের সেই রাস্তা দিয়ে যেতে হবে ।
IMG_1854
IMG_1858
ওখানে ইয়াক চিস ঝুলান দেখলাম আর তারা আমাদের চিস দিল খাবার জন্য যা শক্ত ইটের টুকরা বলা যায় । কিন্তু সেটা পাথরে মত শক্ত । আমি অনেক চেষ্টা করে একটু কামড় দিলাম আর বাকি টা রেখে দিলাম ব্যাগে ।
DSC01873
সেখানের থুকপা খেতে অনেক টেস্টি ছিল । আমাদের খাওয়া শেষ সে সময় আমেরিকান এক লোক আর মহিলা আমাদের টেবিল সেয়ার করল । আমরা খাবার শেষ করে হাঁটার জন্য রেডি হলাম কারণ আমার দেরি করে ফেলেছিলাম, প্রায় ২ টার মত বাজছিল । অনেক হাঁটতে হবে আর পথ মেঘে ঢেকে যাচ্ছে তাই আমরা দ্রুত বেরিয়ে পরলাম সেখান থেকে । আমরা আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠা শুরু করলাম ।  কিছু ফুলের গাছ দেখতে পেলাম আর গাইড আমাকে একটা ফুলের গাছ দেখিয়ে বলল এতা বিষাক্ত । সান্দাকফু মানেও বিষাক্ত  গাছের এলাকা । কিছু দূর যেতেই মেঘে ঢেকে গেল রাস্তা  আর অনেক ঠাণ্ডা লাগছিল । সামনে বেশি দূর দেখা যাচ্ছিল না । টুম্বলিংএ আগের দিন বিকেলে মেঘের নিচের ঢাকা রাস্তার কথা বলেছিল হয়তো সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম । যেতে যেতে এক পাহাড়ি বড় ছাগলের পাল্লায় পরলাম সে আমাদের দেখে  তেরে আসছিল ।গাইড আমাদের কে পাহাড়া দিয়ে নিয়ে গেল ।
IMG_1868
আমরা বিকেভঞ্জানের  কাছে চলে আসলাম তখন গাইড আমাকে বলল আমাদের কালাপখারি হোটেলে এন্ট্রি দেওয়ার কথা সে ভুলে গেছে । আমি জিজ্ঞাস করলাম, না দিলে কি কোন সমস্যা হবে, সে বলল তেমন না । আমি আর গাইড অনেক আগে ছিলাম । গাইড গেল ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীনকে নিয়ে আসতে আর আমি উঁচু সিঁড়ির রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে উঠতে লাগলাম । অনেক উঁচা পথ ছিল আর উঠতে উঠতে হাপিয়ে গেলাম । আমি উপরের দিকে উঠে বসলাম  কিন্তু এখনও শেষ না এইরকম আরেকটা সিঁড়ি ছিল । ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন আসা মাত্র আমি আবার উঠা শুরু করলাম । আমি এক রিদমে হাটা শুরু করলাম আর মেঘের ভিতর দিয়ে হাঁটতে থাকলাম ।
IMG_1873
উঠার পথে মেঘের ভিতর দিয়ে সান্দাকফুর প্রাইভেট লজ দেখা যাচ্ছিল কিন্তু অনেক উপরে । মনকে সান্তনা দেওয়া ছাড়া আর  কিছু করার ছিল না যে আমাদের আরও অনেক উপরে উঠতে হবে । সালেহীন দেখা মাত্র মুখ শুকনা হয়ে গেল । আরও ২  কিমি র মত পথ ছিল ।
IMG_1876
IMG_1878
আমি আর গাইড এক পর্যায়ে মেঘের উপরে চলে গেলাম কিন্তু হেটে , ঊড়ে না  । আমরা যেই পথ দিয়ে এসেছিলাম সেই পথ আর দেখা যাচ্ছিল না, তা তখন মেঘের নিচে । আমি এর আগে প্লেনে শুধু এরকম দৃশ দেখছি কিন্তু আমি কোনদিন হেঁটে এরকম উপরে উঠতে পারব আগে কখনো ভাবি নি । এখন আর আমাদের পথে মেঘ নাই আর অনেকটা পরিস্কার পথ ,অনেক দূর দেখা যায় ।
IMG_1880
আমি কোন রকম রেস্ট ছাড়া একই রিদমে উপরের দিয়ে উঠতে লাগলাম কিন্তু রাস্তা আগের চেয়ে আরও উঁচু  হতে শুরু করল । অনেক ক্লান্ত হয়ে গেলছিলাম আর মনে হচ্ছিল হাঁটতে হাঁটতে পিছনে পড়ে যেতে পারি। আমার জুতা তেমন শক্ত ছিল না আর তাই পায়ের নখের অবস্থা খারাপ ছিল কিন্তু আমাদের শেষ ঠিকানা আস্তে আস্তে কাছে আসছিল তা দেখে ভাল লাগছিল । আমরা শেষ দিকে এসে নেপালের রাস্তায় ঢুকলাম । মেটে পথ ছিল ধুলাতে মাখা । গাইড আমাকে জানালো এই রাস্তাটা নতুন হয়েছে , এই রাস্তা নেপালের আরেক রাস্তার সাথে যোগ হবে কিন্তু এখনও কাজ চলছে । আমরা সেই রাস্তার শেষ মাথাই চলে এসেছে আর সামনে ইন্ডিয়ার সান্দাকফুর জিপের রাস্তা শুরু । কিন্তু সামনে গিয়ে দেখি রাস্তা দুটার মাঝে শুধু একটা গাছ আছে এবং রাস্তা দুইটা কোথায় গিয়ে মিলেছে দেখা যায়না । গাইড আমাকে বলল সে নতুন রাস্তা দেখে ভুল করে এই পথে এসেছে আর মনে হয় সামনে যাওয়া যাবে না। আমি ভুরু না কুচকে সামনে আগাতে থাকলাম কিন্তু ভাবছিলাম এই রাস্তা দিয়ে নিচের দিকে যেতে গেলে আমার পায়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে আর অনেক দূর চলে এসেছি আমরা । একটু সামনে গিয়ে গাইড হেসে বলল সেই গাছের নিচ দিয়ে শীকড় বেয়ে একটা রাস্তা আছে আর সে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিল । রাস্তাটা অনেক জটিল ছিল আর দূর থেকে বুঝার কোন উপায় নেই যে এখান দিয়ে উঠা যাই । একটু পা এদিক ওদিক হলে নেপালের জঙ্গলে কত নিচে পরবো তার ঠিক নাই । ভয়ে ভয়ে উঠলাম আর গাইডকে বললাম ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীনের জন্য সেখানে থামতে যাতে তারা কোন ভুল না করে । আমরা সবাই উঠলাম । ৫০-৬০ ডিগ্রি উপরের দিকে সান্দাকফুর প্রাইভেট লজ দেখতে পারছিলাম । গাড়ি কিভাবে এত খাড়া উপরের দিকে উঠছে নামছে তাই আমরা চিন্তা করছিলাম । আর পরলে তো একেবারে শেষ। গাইড বলল অনেক আগে একটা গাড়ি রাস্তা বাঁক মিস করে উপর থেকে পরেছিল। আমি আগে থেকে রেস্ট নিচ্ছিলাম তাই আমি আর গাইড উপরের দিকে শুরু করলাম, প্রায় ১/২ কিমি এর মত পথ ছিল ।
IMG_1886
আমি আস্তে আস্তে দুই বার রেস্ট নিয়ে উঠে গেলাম উপরে । আমি,  ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীনের আসা দেখছিলাম কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল আর লজ আগে থেকে  ঠিক করা ছিল না । তাই গাইড অপেক্ষা না করে আমাকে নিয়ে একেবারে উপরের দিকে উঠে গেল । আমরা ঠিক সূর্যাস্তের একটু আগে পৌঁছেছিলাম  সেখানে ।

সান্দাকফুতে এক কঠিন রাত

আমাদের বাজেটের সমস্যার জন্য সালেহিন বলেছিল গাইডকে বলতে যে কম দামি হোটেল নিতে যা ৪৫০ রুপীর মধ্যে পরে। গাইড আমাকে কাছের কিছু হোটেলে নিয়ে গেল যেখানে থাকা অনেকটা কষ্টের কিন্তু ভাড়া কম । আর অন্য আশেপাশের লজগুলো অন্যরা নিয়ে নিয়েছে । সেখানের প্রাইভেট লজের ভাড়া অনেক বেশি তাই সে আমাদের সরকারি লজের দিকে নিয়ে গেল । আমরা গিয়ে ৪০০রুপীতে একটা তিন বেডের রুম পেলাম । দেখে ভাল লাগল কিন্তু টইলেট ছিল পাবলিক । গাইড বলেছিল প্রাইভেট লজে গোসল করার জন্য গরম পানি পাওয়া যায় । আমি  সরকারি লজে গোসলের জন্য পানির কথা জানতে চাইলাম সে বলল এখানে পানির সমস্যা  ।আসলে যেরকম ঠাণ্ডা ছিল সেখানে কেউ গোসল করতে চাবেনা কিন্তু গাইড বলল আমরা সকালে গরম পানি পাব। আমি গাইডকে বললাম  প্রাইভেট লজ টাও আমরা দেখতে পারি  কিন্তু সে বলল সেখানে রুম ছোট আর ভাড়া বেশি আমরা  যেটা নিয়েছি সেটাই ভাল। একটা মাত্র রুম তাই আমি বললাম আমরা থাকব আর আমার অন্য সাথীদের নিয়ে আসি বলে বের হয়ে দেখলাম ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন এসে গেছে আর তারা ওখানের চেক পয়েন্টে পুলিশের সাথে কথা বলছিল ।সালেহীন আমাকে দেখিয়ে বলল সে পারে হিন্দি বলতে । আসলে সেই লোক যখন জানল যে আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি তখন আমাদের সাথে হিন্দিতে কথা বলতে চাইছিল আর যখন জানল তারা হিন্দি জানে না তখন অবাক হল । সে মনে হয় ইংলিশ জানে না তাই হিন্দিতে আটকে ছিল । আমরা চেক পয়েন্টে এন্ট্রি দিলাম । আমি ওয়াহিদ ভাইকে আমাদের রুমের কথা বললাম। ওয়াহিদ ভাই প্রাইভাট লজে গিয়ে রুম দেখতে চাইল সেখানে রুমের সাথে টইলেট ছিল কিন্তু দুই বেড এর একটাই অনেক ছোট রুম ছিল, সেখানে ৩ জন থাকা কঠিন আবার ভাড়া বেশি, ৫০০ রুপী । তাই আমাদের কাছে সরকারি লজ ছাড়া আর কোন ভাল জায়গা ছিল না । । গাইড আমাদের জানাল আমাদের লজে ইয়াকের মাংস পাওয়া যায় আর ওয়াহিদ ভাই রাতের খাবার অডার দিয়ে দিল। আমাদের ব্যাগ নিয়ে রুমে রেখে আমরা বাইরে বের হলাম আশে পাশে ঘুরে দেখার জন্য আর ক্ষিধাও লেগেছিল ।
IMG_1893
আমরা ঠাণ্ডার কারনে বেশীক্ষণ  বাইরে থাকতে পারলাম না । প্রাইভেট লজের নিচে খাবার রেস্টুরেন্ট ছিল আর ঠাণ্ডা বাতাস ধুকছিল না সেখানে । একটু সস্তি পেলাম কারণ আমি যা পরেছিলাম তাতে এই ঠাণ্ডা একেবারেই মানাচ্ছিল  না । আমরা সেখান থেকে  কাঁচের দেওয়ালে মধ্যে থেকে  কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছিলাম । সূর্যাস্তের সময় অনেক সুন্দর লাগছিল । অনেক ক্ষিধা লেগেছিল আর ২-৩ বার করে স্নাক্স এর অর্ডার দিলাম । সেখানে আরও অনেক গাইড ছিল ।  তারা বলল সেখানের তাপমাত্রা রাতে ৫ ডিগ্রীর নিচে  নামে আর একটু ভয় লেগেছিল রাতে যে কি হয়। আমাদের আগামি দিনের প্লান বললাম যে আমরা ফালুট যাব আর তারপরে সেখানে থেকে গরকিখোলা হয়ে শ্রীখোলা যাব। তারা বলল ভাল একটা প্লান আর শ্রীখোলা অনেক সুন্দর জায়গা। সেখানে এক ঘণ্টার মত কাঁটিয়ে ফিরে গেলাম আমাদের লজে । অনেক ঠাণ্ডা আর বিছানা ঠান্ডায় বরফ হয়ে ছিল । ভাবছিলাম কিছুক্ষণ লেপে মুরি দিলে হয়তো বিছানা গরম হবে কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়না। আমি রেইনকোট বাদে সব পরে ফেললাম কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়না , আমার হাড়ও কাপা শুরু করেছিল । সালেহীন আমার পাশে বসে কাপছিল। সে মধু নিয়ে এসেছিল সেটা সেয়ার করলাম । কিন্তু এই ঠাণ্ডা মধুর গরম বুঝে না । কিছুক্ষণ পরে আমাদের গাইড কয়লার আগুন নিয়ে আসল । আমরা আগুন জ্বলিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম আর আমার পা কয়লার উপরে দিয়ে দিলাম একটু ভাল লাগছিল । ওয়াহিদ ভায়ের টগবা চলে আসল । এতা সেখানের এলকোহল। ওয়াহিদ ভাই খাচ্ছিল উনার সে কারনে ঠাণ্ডা কম লাগছিল । আর আমরা শুধু মধুর উপরে ছিলাম ।
DSC01883
কয়লার আগুন আস্তে আস্তে নিভতে লাগল। আমরা লেপের নিচে ঢুকে ঘূমায়ে পোলাম। প্রায়ই ৯ টার দিকে গাইড ডাক দিল রাতে খাবারের জন্য । কিন্তু উঠতে ইচ্ছা করছিল না । এই ঠাণ্ডাই বের হওয়া অনেক কষ্ট ছিল তাছাড়া বিছানা টা একটু গরম হয়েছিল । আমি হাতের গ্লবস আর পায়ে মুজা পরেই শুয়েছিলাম তাই জুতাটা পরে বেরিয়ে গেলাম । আমার নাক দিয়ে পানি পরছিল তখন। খাবারে ছিল সবজি আর ইয়াক এর মাংস । ক্ষিধা বেশি ছিল আর গরম লাগানোর জন্য ইয়াক মাংস পুরাটাই খেয়ে নিলাম । তখন হাত ধুতে হবে বলে ভয় লাগছিল কিন্তু আমাদের গরম পানি দিয়েছিল । অনেক ঠাণ্ডা তাই তাড়াতাড়ি করে খেয়ে ফেললাম আর আবার লেপের নিচে ঢুকে পরলাম । বিছানা আবার ঠাণ্ডা হয়ে ছিল । লেপের নিচে গিয়ে মনে হচ্ছিল শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে । আমি একটু এপাশ অপাশ করলাম । কিন্তু লেপের তল থেকে মুখ বেড় করে শ্বাস নেওয়া অসম্ভব ছিল। তখন মনে হচ্ছিল শ্বাস কষ্টে মারা যাব  । কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম হাঁস ফাঁস করতে করতে ঠিক মনে নাই । হয়ত ইয়াক এর মাংস কাজ করা শুরু করেছিল । সকালে ঘুম থেকে উঠে গেছিলাম  সূর্যোদয় দেখার জন্য । টইলেটের গেলাম আর যখন পানি দিয়ে ধুচ্ছিলাম তখন পানি এতই ঠাণ্ডা ছিল যে হাত ব্যাথা করছিল । ঠাণ্ডা পানির জন্য এরকম প্রচণ্ড ব্যাথা প্রথম অনুভব করেছিলাম ।
রুমে দেখলাম কেউ নাই ভাবলাম ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন গেছে উপরের চুড়ায় সূর্যোদয় দেখতে । তখন প্রায় ৫ঃ৩০মি ।  আমি গাইডকে বাইরে পেলাম সে বলল সারা রাস্তাতে বরফ পরে আছে আর ঘাসে পিছলে পরে যেতে পারি । আমি বললাম কোন বেপার না চলেন। উপরে গিয়ে দেখলাম সালেহীনরা নাই। একটু উঁচু চূড়া ছিল আর গাইডের ভয় দেখানোর কারনে আমি হাত পা মিলিয়ে উপরে উঠছিলাম। আমি চূড়ায় উঠলাম যা ছিল ৩৬৩৬ মি। সেখানে অনেকে ছিল , আমেরিকান দুইজন ভাল কামেরা নিয়ে ছবি তুলছিল।
DSC01907
সেখানে এভারেস্ট দেখতে পেলাম , গাইড আমাকে এভারেস্ট মাকালু , লুতসে চিনাল আর একটা ভুটানের পাহাড় দেখাল । একেবারেই মেঘ ছিল না আর অনেক পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল আজকে ।
IMG_1954 IMG_1950
হাত ঠাণ্ডায় কাপছিল তাই ছবি তুলতে সমস্যা হচ্ছিল । গাইড বলল সে জুতা পরে আসেনি তাই সে থাকতে পারছে না । আমি একটু নিচের দিকে গিয়ে বসলাম যাতে ঠাণ্ডা বাতাস কম লাগে ।  আমি সূর্যোদয় ছবি তুলছিলাম আর আমেরিকান একজন ভাল লেন্সের কামেরা নিয়ে আমার একটু উপরে বসে ছবি তুলছিল । একটু খারাপ লাগছিল তাদের ছবি তুলা দেখে । মেঘের উপর থেকে সূর্যোদয় দেখার অন্য রকম অনুভুতি ।
IMG_1908
IMG_1923
তখনও কাঞ্চনজঙ্ঘার গায়ে সূর্যের আলো এসে পরেনি । সূর্যোদয় হচ্ছিল এভারেস্টের ঠিক উলট দিক থেকে । এর মধ্যে দেখলাম সালেহীন আর ওয়াহিদ ভাই আসছে ।
IMG_1912
আস্তে আস্তে  এভারেস্টের চূড়ায় সূর্যের আলো এসে পড়তে লাগল আর কাঞ্চনজঙ্ঘা  লাল হতে শুরু করল । আমি ১৮০ ডিগ্রি ভিউ নিতে থাকলাম ।
IMG_1932
থ্রি সিস্টার সুন্দর লাগছিল সেদিন সকালে । ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন একটু নিচের দিকে আরেক চূড়াই গিয়ে বসে ছবি তুলছিল । কিছুক্ষণের মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা সাদা হয়ে উঠল ।
IMG_1960
আমি চলে গেলাম লজে, আমাদের আজকে অনেক হাঁটতে হবে তাই আমরা ৭ টায় বেরাব  । ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীনও চলে আসল আর আমরা নাস্তা শেষে সব গুছিলে নিলাম । আজকে প্রথমে যাব ১৪ কিমি হেঁটে সাবারগ্রাম আর এর আগে কোথাও  পানি  পাবোনা তাই পানি  সঙ্গে নিতে হবে । রোদ পরা শুরু হল কিন্তু ঠাণ্ডা তখন ছিল অনেক ।  আজকের দিনে উপরে উঠা লাগবে বা তেমন আর অনেক ঠাণ্ডা ছিল তাই ছোট  এক বোতল পানি নিলাম। আমাদের অ্যাকাউন্ট মানেজার সালেহীন তার হিসাব শেষ করার পরেই আমরা বেরিয়ে পরলাম ।

সান্দাকফু থেকে ফালুট

আমরা আজ  হাঁটব  ২১ কিমি আর শেষ গন্তব্য ফালুট । এভারেস্ট দেখে দেখে হাঁটছিলাম । আজকের দিনটা অনেক সুন্দর, ঠাণ্ডা আছে কিন্তু আকাশ পরিষ্কার আর একেবারে নীল ছিল । অনেক সুন্দর পথ, পাইন গাছের ফাঁক দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা অন্য রকম লাগছিল । ছবি তুলে হাঁটা শুরু করলাম ।
IMG_1964
IMG_1966
আমি ছবি তুলতে তুলতে যেতে থাকলাম । কিছুদুর যেতে হাল্কা তুষারের সাদা রাস্তা পেলাম ।
IMG_1977
গাইড বলল আমাদের অনেকদুর হাঁটতে হবে তাই একটু তাড়াতাড়ি যেন হাঁটতে থাকি । কিন্তু এরকম দৃশ রেখেতো আর যাওয়া যায় না । কিছুক্ষণ ছবি তুলে জোরে হাঁটা দিলাম গাইডের পিছনে। সে অনেক দ্রুত হাঁটছে আজকে । ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন অনেক পিছনে পরে গেল । আসে পাশের দৃশ এমন সুন্দর যে জোরে হেঁটে এতো সুন্দর পরিবেশ না উপভোগ করে যাওয়া বোকামি হবে । নীল আকাশ, তেমন রোদ পড়ছে না আর  তেমন উঁচুনিচু পথও না । এখানের গাছগুলো অন্য রকম । অনেক দূরে দূরে পুড়ে যাওয়া সিল্ভার রঙের দেবদারু, পাইন  আর rhododendron  গাছ দেখা যায় কিন্তু আমার হাঁটার পথের পাশ দিয়ে তেমন সবুজ গাছ ছিল না । মনে হচ্ছিল খোলা আকাশের নিচে হাঁটছি ।
IMG_1978
IMG_1982
IMG_1983
আমরা দুইদিন এত হেঁটেছি কিন্তু আজকে যেন অন্য দিন মনে হচ্ছিল । মনে হচ্ছিল আমাদের গত দুইদিনের এরকম কষ্ট করে উপরে উঠার সফল পেতে শুরু করেছি।
যাবার পথে বাজ পাখি দেখলাম ঘুরা ঘুরি করছিল । একটু কাছে গিয়ে দেখলাম সে তার লেজ মেলে নাচ্ছে । আর পিছনে একটু নিচে গাছের উপরে একটা ইগল বসে আছে  ।IMG_1987
IMG_1990
আমি আমার হাঁটার গতি কমিয়ে দিলাম । কিছু সুন্দর গাছ পেলাম যার গায়ে পাতা নাই কিন্তু এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যে দেখতে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে । আমাদের গাইড পরে জানাল এখানে প্রায় ১৫ বছর আগে নাকি আগুন লেগে গাছগুলো পুড়ে গিয়েছিল।  অনেক প্রশান্তি  এ জায়গায় আর আশেপাশে কেউ থাকেনা ।
IMG_1988
IMG_1999
IMG_2002
IMG_1992
অনেক্ষন হেঁটে একটা পাথরের সামনে রেস্ট নিলাম । ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন পিছনে আছে । সেখান থেকে অনেকক্ষন পরে এভারেস্ট সুন্দর দেখা যাচ্ছিল । ওপাশে নেপালের গ্রাম ।
IMG_2005
গাইড আমাকে বলল সেখান থেকে মেয়েরা খেতে চাষাবাদ করে যা ফলায় তা ইন্ডিয়ায় রিম্বিক গিয়ে বিক্রি করে আসে আর সেখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিষ কিনে আবার ফিরে যায় । এক এক জন মেয়ে ৬০ কেজির মত জিনিষ নিয়ে ৪-৫ দিন হাঁটে । আমি মনে করেছিলাম গাইড ১৫ কেজি বলেছে তাই তেমন অবাক হয়নি । আমাদের ৬-৭ কেজি টানতেই দুই দিনে অবস্থা খারাপ । আর সেখানের মেয়েরা ৬০ কেজি টানে সেটা অবাক লাগছিল । সেখানে বিদুৎ নাই আর লেখাপড়াও সেখানে করে না । পাহাড়ের জীবন অনেক কঠিন । তাদের জন্য একটু খারাপ লাগছিল । সেখান থেকে একটু আগিয়ে নিচের দিকে নামছিলাম সামনে অন্য রকম একটা পথ পেলাম । ওয়াহিদ ভাই এর কাছে কামেরা দিয়ে বললাম আমার পিছন থেকে ছুবি তুলেন । সামনে কাঞ্চনজঙ্ঘা বামে এভারেস্ট আর আসে পাশে একেপারে ফাকা  এর মধ্যে দিয়ে আমরা হেঁটে যাচ্ছি ।
IMG_2012
IMG_2028
সামনে যেখান থেকে আমারা হাঁটছিলাম সেখানে রাস্তার কোন চিহ্ন নেই । আমাদের  গাইড আগিয়ে যাচ্ছি আর আমরা তাকে দেখে হেঁটে যাচ্ছিলাম । এরকম উদ্ভূত ঢেউ খেলান পথ দিয়ে হাঁটতে অনেক ভাল লাগছিল । সেখানে কয়েকজন কাঁধে মালামাল নিয়ে যাচ্ছিল হয়ত তারাও ফালুট যাচ্ছে । দেখে বুঝা যাচ্ছিল অনেক ভারী জিনিস নিয়ে তারা যাচ্ছে ।
IMG_2030
IMG_2035
আমরা ছবি তুলছিলাম আর গাইড এর মধ্যে অনেক আগিয়ে গেল । ঢেউ খেলানো এই পথ হাঁটতে হাঁটতে সামনে গাইডকে পেলাম  তার আরেক গাইড সঙ্গী নিয়ে বসেছিল । অনেক হেঁটে হাপিয়ে গেছি, দূরে একটা বড় ধরনের ইয়াক  বসেছিল । গাইড সামনে যেতে মানা করল কারন তারা একটু বেশি হিংস্র তাই দূর থেকে ছবি তুলছিলাম ।
IMG_2037
৫মিনিটের মত রেস্ট নিলাম আর আমাদের কাছে যা চকলেট ছিল তা খেলাম । আবার হাঁটা দিলাম সেই ঢেউ ঘেলান রাস্তা দিয়ে আর ছবি তুলতে থাকলাম ।
IMG_2049
অনেকক্ষণ হাঁটার পরে আমরা এবার নিচের দিকে নামতে থাকলাম। পথে পড়ল জিপ এর রাস্তা আবার একেবারে ঢালু নিচের দিকে, মনে হয় ৫০ ডিগ্রি মত হবে । পাথরের খাড়া রাস্তা তাই আস্তে আস্তে নামছিলাম নিচের দিকে ।
IMG_2052
নামার পরে একটু যেতেই আমার ডান পায়ের ব্যাথা আবার বেড়ে গেল এবার একেবারেই পা ফেলতে পারছি না ।  সমতল জায়গাতেও কষ্ট হচ্ছে । একারণে পাথরের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে অনেক ভয় হচ্ছিল । মনে হচ্ছিল আমার পা গেছে আর পা ফেলার জোর নায় । অনেক কষ্ট করে অনেকক্ষণ ধরে একটু হেঁটে আগালাম । ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন আমার জন্য ৫ মিনিটের ব্রেক নিল ।  একটু গুড়ালিতে নাড়াচাড়া করলাম আর ক্ষিধাও লেগেছিল আমাদের । আমি আমার সব বিস্কুট সেখানেই শেষ করে ফেললাম । পা একটু ভাল লাগছিল আর সামনে উপরের দিকে উঠতে হবে তাই একটু সস্তি ছিল। আমার এই পায়ে নিচের দিকে নামা অনেক কষ্টের বেপার ছিল। আমি আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকলাম আর কিছুক্ষণের মধ্যে আবার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেলাম কারন আমরা উপরের দিকে উঠছিলাম । সামনে একটা উঁচা পাহাড় পড়ল । আমরা সবাই অনেকটাই ক্লান্ত আর দূরে দেখা যাচ্ছিল সাবারগ্রাম যা সেখান থেকে তখনও ১ ঘণ্টার মত লাগবে ।
IMG_2055
আমরা স্বাভাবিক গতিতে হাঁটতে লাগলাম । সাবারগ্রামের নিচের দিকে কয়েকটা ইয়াক দেখতে পেলাম এর মধ্যে একটা ইয়াক অনেক সুন্দর ছিল আমি সেটার ভাল করে ছবি তুলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু একটু সামনে যেতে দেখলাম সেটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে । খেপে তাড়লে খবর আছে আর আমার পায়ের অবস্থাও তেমন ভাল না যে দোড় মেরে পালাব । তাই যে কোন ভাবে ছবি তুলে কেটে পড়লাম ।
IMG_2061
সাবারগ্রাম ৩৫৩৬মি, জায়গা অনেক ছোট আর সেখানে একটাই মাত্র খাবার জায়গা ছিল । আমরা থুকপা অর্ডার দিলাম । অনেক ঠাণ্ডা ছিল সেখানে আর আমি বাইরে বসে আমার পায়ের নখকে একটু সূর্যের আলো দিচ্ছিলাম । আমার জুতাটা এরকম ট্রেকের জন্য ভাল ছিল না,  নরমাল কুয়ালিটির পাওয়ারের জুতা তাই নখের অবস্থা ভাল ছিল না। আমি চায়ের অর্ডার দিয়ে বসে ছিলাম আর ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন আসল । ইসরাইলী ছেলে মেয়ে তাদের খাবার শেষ করে বেড়াচ্ছিল । কালাপখারি যাবার পথে এরা আমাদের ক্রস করে আগিয়েছিল । আমি দেখলাম মেয়েটার ব্যাগের চেন খুলা ছিল তাই তাকে বললাম , সে ঠিক করে তার সাথিকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল । আমরা থুকপা খাবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম । বাইরে বাতাস ছিল আর ঠাণ্ডাও লাগছিল তাই ভিতরে এসে বসলাম। সেখানে রেড পান্ডার বিষ্ঠা ঝুলান ছিল ।  আমেরিকান ছেলে মেয়েরা এসে বসল , এরাই সান্দাকফু তে ভরে ভাল লেন্সের কামেরায় ছবি তুলছিল । তাদের সাথে সেখানে পরিচয় হল । তারা আমেরিকাতে শিক্ষক আর ইন্ডিয়াতে তারা একটা পাকেজ টুরে এসেছে অনেকটা একমাসের মত । ওয়াহিদ ভাই ইন্ডিয়ায় অনেক ঘুরেছে আর ওয়াহিদ ভাই উনাদের সাথে কথা বলছিল । উনারা বাংলাদেশের নাম শুনেনি তাই Internation Mother Language Day বাংলাদেশের ভাষার জন্য পালন করা হয় সেই পরিচয় দিলাম । তাদের সাথে যে গাইড ছিল সে কলকাতার মনে হচ্ছিল সে সেরপা বা সেখানের না ।  আমাদের খাবার চলে আসল কিন্তু সাধ মটেও ভাল ছিল না । অনেক ক্ষিধা লেগেছিল আর থুকপা ছাড়া সেখানে কিছু ছিল না । আমেরিকানদের জন্য তাদের পাকেজ টুর থেকে ভাল ধরনের খাবার ছিল । যায় হক না তাকিয়ে খেয়ে বেরিয়ে পরলাম আরও ৭ কিমি হাঁটা লাগবে কিন্তু পেট ভরেনি তেমন। সেখানে নিচের দিকে মলেয়ের রাস্তা ছিল যেখান থেকে রাম্মান হয়ে রিম্বিক যাওয়া যায় । কিন্তু সোজা একটা রাস্তা ছিল ফালুট যাবার ৭কিমি পথ আর  আমরা সেই পথে হাঁটা ধরলাম। অনেকটা সাপের মত আঁকাবাঁকা কিন্তু  উঁচানিচা পথ না । বাতাস ছিল আর অনেক ঠাণ্ডা লাগছিল । আমার পায়ের অবস্থা মতেও ভাল ছিল না । কিন্তু বেশি ঢালু পথ ছিলনা বলে হাঁটতে পারছি ভালই । আস্তে আস্তে মেঘ নেমে আসছিল। কিছু জায়গাতে আবার ঠাণ্ডা একটু কম লাগছিল কারন যে পাশ দিয়ে বাতাস ছিল সেপাশে উঁচা পাথর ছিল । রেস্ট নিয়ে নিয়ে হাঁটছিলাম । আমরা লজ বুক করিনি তাই গাইড আমাদের আগেই হাঁটা দিয়ে আগিয়ে গেল। আমরা দেখলাম সে খাঁড়া পাহাড় বেয়ে রাস্তা ছাড়াই উঠে আচ্ছে । আমি প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম যে আমাদের হয়ত সেই পথে উঠতে হবে ।
IMG_2070
পরে দেখলাম জীপের রাস্তা আছে  আর আমি আগিয়ে গেলাম। আর শেষ দিকে জীপের রাস্তা ছিল আর একটা সটকাট রাস্তা ছিল কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে গেলে যে ফালুটে উঠা যাবে তা জানিতাম না আর গাইডও ছিল না । আমি জানতাম এই পথে যাওয়া যাবে তাই ওয়াহিদ ভাইকে বললাম আপনি থামেন আমি আগিয়ে দেখি । দেখলাম উঠার রাস্তা আছে আর ওয়াহিদ ভাইকে বললাম আসতে। কিছুক্ষণ পরে গাইড আসল আর আমাকে উপরে উঠার জায়গা দেখাল । আমি সেই পথে উঠে গেলাম উপরে ।

ফালুটে একটু সস্তির রাত

আমি উপরে উঠে দেখলাম গাইড সেখানে নাই । তার পরে গাইড সামনের লজ থেকে বেরিয়ে এসে বলল সব প্রাইভেট লজ বুক হয়ে গেছে এখন এই সরকারি লজ আছে । গাইড তাদের সাথে আলোচনা করছিল হয়ত সেটা নেপালি ভাষা কিছু বুঝা যাচ্ছিল না কিন্তু মনে হচ্ছিল ভাড়া নিয়ে আলাপ করছে । তার পরে গাইড আমাকে ৩ বেডের একটা রুম দেখিয়ে বলল এটার ভাড়া ৪০০ রুপী । আমি ভাবলাম একটু ভাড়া কমানোর চেষ্টা করি তাই গাইড কে বললাম ৩০০ রুপী কি হবে ? গাইড তাদেরকে রাজি করাল ৩০০ রুপীতে । কিন্তু তারা রুম দিতে রাজি না হলে আমাদের আর কোন থাকার জায়গা ছিল না কিন্তু গাইড আমাকে আসার সময় বলেছিল সেখানের সরকারি লজের ভাড়া ৩০০ এর মত তাই একটু দর করেছিলাম । দুইটা রুম ছিল কিন্তু আমি পশ্চিম দিকের রুম নিয়েছিলাম কারণ পূর্ব দিক থেকে বাতাস আসছিল। আমরা সেখানে ৩ঃ৩০ এর মধ্যে পৌঁছয়ে গেছিলাম । সালেহীন ঠাণ্ডায় কাপছিল কিন্তু রুম এর ভিতরে তেমন  ঠাণ্ডা ছিল না কারণ ঠাণ্ডা বাতাস আসছিল না । ওয়াহিদ ভাই বলল এখন রুমে বসে না থেকে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি । গাইড আমাদের নিয়ে উঁচু চূড়া দেখাল সেখান থেকে সকালে আমরা সূর্যোদয় দেখব । কিন্তু উপরের দিকে অনেকগুল ইয়াক ছিল তাই গাইড আমাদের তাদের পাশে যেতে মানা করল। আমরা একটু নিচ থেকে সূর্যাস্ত দেখছিলাম । মেঘ মনে হচ্ছিল আমাদের অনেক কাছে আর সূর্যাস্ত এর কারণে অনেক সুন্দর লাগছে ।
IMG_2091
সাদা মেঘের দল আমাদের নিচে আর চারিদিক ঘিরে ফেলেছে।  সেখানে অনেক ঠাণ্ডা বাতাস ছিল আর আমরা যা পরে ছিলাম তা তে ঠাণ্ডা মানাছিল না । আমাদের হাতের গ্লবসের ভিতর থেকে হাত জমে যাচ্ছিল ।
IMG_2097
আমার নিচের দিকে নামার সমস্যা ছিল তাই আস্তে আস্তে নামছিলাম ।  আমরা নেমে আর কিছু করার পেলাম না । গাইড বলেছিল এখানে বাতাস অনেক বেশি সান্দাকফুর চেয়ে তাই ভয়ে ছিলাম ফালুটে গিয়ে আমাদের কি অবস্থা হয় । আমাদের রুমে বাতাস ধুকছে না কিন্তু বাতাসের শ-শ শব্দ পাচ্ছিলাম । দুপুরে ভালো কিছু খায়নি তাই ক্ষিধা লেগেছিল অনেক আর ঠাণ্ডাও  লাগছিল। আমি চুলার পাশে গিয়ে একটু গরম হলাম। ফালুট এ গিয়ে একটু ভালো লাগছিল যে সান্দাকফুর মত তেমন ঠাণ্ডা লাগছে না । আমরা খেয়ে দেয়ে একটু ঘুম দিলাম । আবার রাতে খাবার জন্য আমাদের ডাক দিল। ইয়াক এর মাংস ছিল কিন্তু  তেলে ভরপুর। ওয়াহিদ ভাই আর সালেহিল তেমন খেলো না কিন্তু আমার খেতে ভালই লাগছিল। আমাদের খাবার মাঝে আমেরিকান টুরিস্টের গাইড এসে হাজির হল। সে অনেকটা মাতাল ছিল। আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে অবাক হল আর বলল আমরা ট্রেকিং এর জন্য ভালো জায়গা পছন্দ করেছি।  ছেলেটা দারজেলিং এ পড়ে আর গাইড হিসেবে কাজ করে । সেখানে রেডিও তে তারা নেপালি গান শুনছিল ভালই লাগছিল । আমরা বসে কিছুক্ষণ তাদের গান শুনলাম । কিন্তু ঠাণ্ডা কম ছিল না মটেও তাই বেশিক্ষণ সেখানে বসে থাকা গেল না। আমাদের পরের দিন অনেক হাঁটতে হবে আর সকালে সূর্যোদয় দেখতে উঠবো ৫ টাই   তাই তাড়াতাড়ি উঠতে হবে ।   আজকে সান্দাকফুর রাতে মত হাঁসফাঁস লাগছে না কিন্তু বাইরে যে অনেক জরে জরে বাতাস বয়ে  যাচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছিল , প্রচণ্ড বাতাসের ঝাপটার শব্দ শুনতে পারছিলাম । রাতে ২-১ বার সেই শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল ।
সকালে উঠে প্রায় ৫:৩০টাই রেডি হয়ে গেলাম ।  গেটের কাছে অনেক ঠাণ্ডা আর প্রচণ্ড বাতাস ছিল । গাইডকে বললাম আমরা সূর্যোদয় দেখতে যাব কিন্তু সে বলল বাইরে অনেক বাতাস এখন যাওয়া ঠিক হবে না একটু পরে যেতে । আমি রাইন কোট নেবার সময় আগে থেকেই ঠিক করেছিল এরকম প্রচন্ড বাতাস থাকলে রাইন কোটটা পরে নিব। আজকে সেই সময় এসেছে । আমি আধা ঘণ্টার মত অপেক্ষা করলাম গাইডে জন্য । তখন হয়ত সকাল ৬ বাজে , গাইডকে আবার বললাম।  সে বলল তার তেমন গরম কিছু নিয়ে আসেনি তাই সে এখন যেতে পারবে না আমার সাথে। তাই আমি একাই বেরিয়ে গেলাম রাইন কোট পরে । রাইন কোট উইন্ড চিটারের কাজ করছিল সে কারণে গায়ে কোন ঠাণ্ডা লাগছিল না কিন্তু হাতে অনেক ঠাণ্ডা লাগছিল যদিও গ্লবস পরে ছিলাম । আমি গ্লবস পরা হাত রাইনকোটের পকেটে ধুকাতে বাধ্য হলাম । উঠার সময় কয়েকটা ছবি তুলতে গিয়ে হাত একেবারে জমে গিয়েছিল। রেইনকোট না পরে আসলে অনেক বিপদ ছিল । রাস্তা অনেক পিচ্ছিল ছিল শিশিরের কারণে । এক জায়গায় উঠার সময় কিঞ্চিত বরফে ঢাকা রাস্তা পেয়েছিলাম ।
IMG_2102
আমি পাহাড়ের বাকে একজায়গা কিছুক্ষণ বসে ছবি তুল্লাম যেখানে বাতাসের ঝাপটা লাগছিল না । আস্তে আস্তে উপরে দিকে উঠলাম কিন্তু সূর্যোদয় হয়ে গিয়েছিল আর কাঞ্চনজঙ্ঘা সাদা দেখাচ্ছিল । অনেক কাছ থেকে দেখছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাত্র ৪৮কিমি দূরে। এভারেস্টও দেখা যাচ্ছিল কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘার মত কাছে না।
IMG_2160
IMG_2149
কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে সামনে আরেকটা চূড়া ছিল যেখানে গেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও কাছ থেকে দেখতে পারবো। মনে হচ্ছিল সামনের চূড়ায় উঠে আরও কাছ থেকে দেখি । কিন্তু জানতাম তখন আবার তার সামনের আরেক চূড়ায় যেতে মন চাইবে । জায়গাটা অনেক পিচ্ছিল ছিল আর পাহাড়ের গা ঘেসে উঠছিলাম । তাই একা না আগিয়ে চূড়া কাছে বসে থেকে ছবি তুলতে লাগলাম । আজকে আকাশ ছিল একেবারে পরিস্কার আর রোদ পরছিল ফালুটে কিন্তু ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে কাপছিলাম ।
আমি একাই ছিলাম আর অনেকক্ষণ ছবি তুললাম । আমি নামতে যাচ্ছিলাম সে সময় দেখি ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন আসছে রেইন কোট পরে । আমি আবার তাদের সাথে চূড়ায় উঠে ছবি তুললাম।৩৬০০মি উপরে তখন আমরা আর  অনেক বাতাস ছিল সেখানে ।
IMG_2184
একটা সরু পিচ্ছিল পথ সামনে একটা মানিওয়ালের দিকে গেলাম ।  সেখানে আমার অনেকক্ষণ ছিলাম আর একসাথে ছবি তুললাম ।
IMG_2189
IMG_2217
এরই মধ্যে ইস্ররাইলের ছেলেটা আর অস্ট্রিয়ার ভদ্রলোক আসলো । তারা ছবি তুলে চলে গেল । সালেহীন ওয়াহিদ ভাই আর আমি সেখানে আরও অনেকক্ষণ ছিলাম। সালেহীন সেখানে আমাদের অনুভুতির অডিও রেকড করল।  কাঞ্চনজঙ্ঘাকে এত কাছ থেকে দেখে আর ফিরে যেতে মন চাচ্ছিল না। একটু পরেই আমরা নিচের দিকে চলে যাব আর কাঞ্চনজঙ্ঘার এরকম রূপ আমাদের চোখে পরবে না কখনও। আমরা সেখানে সকাল  ৭/৭:৩০ পর্যন্ত ছিলাম কিন্তু আমাদের ৭ টার দিকে গুরখেয় এর জন্য রওনা হবার কথা ছিল। সান্দাকফু থেকে আমি গাইডদের সাথে ঠিক করেছিলাম যে আমরা আজকে রাতে শ্রীখোলাতে থাকবো তাই হাঁটতে হবে ২৫কিমি। গাইড রাতে বলেছিল ৭ টার দিকে বেড়ালে আমরা পোঁছে যাব। কিন্তু এখানে আমরা অনেক সময় নিয়ে নিয়েছি, আমি ১:৩০ ঘণ্টার মতো সেখানে ছিলাম কিন্তু আরও থাকতে ইচ্ছা করছিল। আমরা নিচে নেমে আমাদের ব্যাগ প্যাকিং শুরু করলাম। আমাদের প্যাকিং করা শেষ করে আমরা খেতে গেলাম রান্নাঘরে। সেখানে তারা সব ব্যবস্থা করে রেখেছিল। চাপাতি ছিল আর সবজি । অনেক ভাল লেগেছিল তাদের আপ্যায়ন । কিন্তু সবশেষে যখন সালেহীন বিল দিতে গেল তখন দেখি ১৩০০ রুপীর মত হয়ে গেছে। যদিও ৩০০ রুপীর রুম ঠিক করেছিলাম কিন্তু সেখানে খাবারের দাম অনেক বেশি যা সালেহীনের হিসাবে মিল ছিলনা। সবার কাছ থেকে আবার টাকা তুলে হিসাব শেষ করা হল। আমার কাছে তখন মনে হয় শুধু ৫০০রুপী ছিল।

ফালুট থেকে শ্রীখোলাঃ

আমরা প্রায় ৮:৩০ এর দিকে সেখান থেকে রওনা দিলাম। কিছুদূর যেতে আমরা আরও সামনে থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেলাম। গাইড আমাদের জানালো এটাই আজকে আমাদের শেষ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা । কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরে বরফের আচ্ছান্ন পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। মনভরে কিছুক্ষণ দেখে আবার রওনা দিলাম।
IMG_2238
আস্তে আস্তে আমরা বনের দিকে ঢুকে গেলাম। ভিতরে ঘনবন আর আশেপাশে ছিল বাঁশ ঝার। গাইড আমাদের বলল আমাদের কপাল ভাল থাকলে আমরা রেড পান্ডা দেখতে পারি। আরও ভাল থাকলে হয়ত আমরা বন্য বিড়াল পাবার কথা ছিল । আমার হাতের বামদিকে ছিল ঘন জঙ্গল আর সেখানে সূর্যের আলো পোঁছাচ্ছেনা মতেও। আমরা নিচের দিকে হাঁটছিলাম । কিন্তু নিচের দিকে হাঁটতে আমার সমস্যা হচ্ছিল কারণ আমার পায়ের অবস্থা অনেক খারাপ হয়েছিল। আমি বাম পায়ে জোর দিয়ে একটু জোরে হাঁটার চেষ্টা করছিলাম । সবাই আমার আগে চলে গেল আর আমি পিছে পরে গেলাম। আর ঘন জঙ্গল ছিল কিন্তু গাড়ির জন্য কাটা রাস্তা ছিল। আমি সে পথ ধরে যাচ্ছিলাম কিন্তু সামনে কাউকে পাচ্ছিলাম না। আর আমাদের পিছনেও কেউ নেই।  অন্যদিন সালেহীন পিছনে থাকে কিন্তু আজকে সে গাইডের সাথে হাঁটছে। আর গাইড ভাল করে জানে সেখানে শটকাট রাস্তা । এরকম ঘন জঙ্গলের মধ্যে একা হাঁটতে ভয় লাগছিল । আমি একটা লাঠি আমার সাথে রাখলাম প্রতিরক্ষার অস্ত্র হিসাবে। জানি তাতে তেমন লাভ হবে না তবুও একটু সাহস পেলাম। কিছুক্ষন পরে ওয়াহিদ ভাই আমাকে সঙ্গ দেবার জন্য আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করল। এর আগে ওয়াহিদ ভাই উপরে উঠার সময় সালেহীনের সঙ্গ দিয়েছিল আর আজকে আমার পায়ের অবস্থা খারাপের কারণে আমার সঙ্গ দিচ্ছেন। আমরা আলাপ করতে করতে হাঁটছিলাম ।  উনি আমাদের পরের ট্রেকের কথা বলছিলেন আর আমিও উনার প্লানে রাজি ছিলাম তখন । একটা সমান্তরাল রাস্তা পেলাম আর সেখানে গাইড আর সালেহীন বিশ্রাম নিচ্ছিল। গাইড জানাল তারা বন বিড়াল (বাঘের) পায়ের ছাপ দেখেছে । সেখানে কিছুক্ষণ থেকে আমরা রওনা দিলাম। আরও ঘন জঙ্ঘলের দিকে হাঁটছিলাম। মাঝে মাঝে চেষ্টা করছিলাম রেড পান্ডা দেখা যায় কিনা কিন্তু কেবলি সময় নষ্ট হচ্ছিল। এরকম জঙ্ঘলের মধ্যে দিয়ে এর আগে কখনও হাঁটিনি সেদিন অনেক ভাল লাগছিল।
IMG_2242
বড় বড় গাছের পাতা আলোতে চমকাচ্ছিল যেন মনে হচ্ছিল ফুল ধরে আছে ।
IMG_2259
মূল রাস্তার পাশে শটকাট রাস্তা পেলেই আমরা তা দিয়ে দ্রুত নিচে নামার চেষ্টা করছিলাম। এসব শটকাট তৈরি হয়েছে গাছের শিকড়ের কারণে । কিছুদুর এভাবে যাবার পরে ওয়াহিদ ভাই আর আমি একটা শটকাট  পেলাম । আমরা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না যে এতা দিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কিনা।  আমি সাহস নিয়ে বললাম চলেন। কিন্তু এটা একটু বড় রাস্তা ছিল। সালেহীনের জুতা খয় হওয়া আর গাইড আজকে স্যান্ডেল পরেছিল তাই তাদের পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছি না। কিন্তু কিছু ভেজা জায়গাই আমি মানুষের পায়ের কিঞ্চিত পায়ের ছাপ পেলাম। একটু সাহস বাড়ল। সেই পথ ছিল অনেক নিচের দিকে আর আশেপাশে আমরা মূল রাস্তা দেখতে পারছিলাম না। আমরা অনেক দূর নিচে নেমেছি । ওয়াহিদ ভাই আমাকে বলল আমরা হয়ত ভুল শটকাট বেঁছে নিয়েছি। এরপরে নিচে নামলে কিন্তু উঠা কঠিন হবে। আমি হেসে বললাম কি আর হবে এখানে রাতে থাকতে হবে । কিন্তু আসলেও আমরা যেই রাস্তা দিয়ে নিচে নেমেছি তা দিয়ে উপরে উঠা কঠিন। আমি বাম পায়ে জোর দিয়ে নামছিলাম কিন্তু এর মধ্যে আমার বাম পায়েও ব্যাথা করা শুরু করল কিন্তু কি আর করার এখন দুই পায়ের একই অবস্থা। ওয়াহিদ ভাই হয়ত পায়ের ছাপ লক্ষ করেনি কারণ রাস্তা তেমন ভেজা ছিল না আর ছাপ তেমন বুঝাও যাচ্ছিল না । আমি আরও নিচের দিকে নামতে থাকলাম কিন্তু মূল রাস্তা তখনও দেখা যাচ্ছে না আর আমরা গভীর জংগলের মধ্যে। প্রায় ১/২ কিমি রাস্তা হবে সেটা আমরা এভাবে গাছের শিকড়ে পা রেখে নিচে নামলাম । শেষমেশ আমরা মূল রাস্তা পেলাম আর কিছুক্ষন পরে গাইড আর সালেহীনকে সাথে পেলাম।
IMG_2261
তারাও একই পথে নিচে নেমেছে। আমরা সেখানে কিছুক্ষন রেস্ট নিলাম। গাইড আমার পায়ের অবস্থা জানতে চাইলো , আমি বললাম তেমন খারাপ না, হাঁটতে পারব। এর পরে আমরা একসাথেই চলা শুরু করলাম। গাইডকে রসিকতা করে বললাম আমাদের জন্য অন্তত একটা রেড পান্ডা গাছে বেঁধে রাখতে পারতো তাহলে  রেড পান্ডা না দেখার জন্য মন খারাপ লাগত না ।
গাইড তারপরে কিছু আজব রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। একটা রাস্তা মনে হচ্ছিল মাটির নালা । বর্ষার সময় হয়ত এই পথে পানি যাই। আমার পায়ের অবস্থা এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে আমি হাতে ভর দিয়ে সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। আবার আগের মত গাছের শিকড়ের পথ পেলাম । আমাদের যাবার পথে একধরনের গাছের ফল গাছ থেকে পরছিল। সালেহিনের মাথা একটুর জন্য বেঁচে গেল । বানররা এই ফলটা খায়, শক্ত আর এত উপর থেকে নিচে পরছে মাথা ফাটার সম্ভাবনা আছে ।
IMG_2247
আমরা গুরখেয়ের  কাছে চলে এসেছি । ঝরনার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল । এক জায়গাই সামাদানের সমতল জায়গা দেখা যাচ্ছিল যেমনটা একটা স্টেডিয়াম । এরকম পাহাড়ি ঢালু  এলাকায় সমতল জায়গা অন্যরকম বেমানান লাগছিল ।
IMG_2267
IMG_2269
আমরা আরও নিচের দিকে যাচ্ছিলাম  গুরখেয়ের দিকে । ওয়াহিদ ভাই এবার উনার বুটের হাঁটা দেখাল । উনি অনেকটা দৌড়াতে দৌড়াতে নিচের দিকে নামতে থাকলেন । কিন্তু আমার জুতা ট্রেক করার জন্য তেমন ভাল ছিল না । আমার পায়ের নখের অবস্থা অনেক খারাপ, নিচের দিকে নামলে নখের উপরে অনেক জোর পরে । আমার দুই হাটু , পায়ের নখ সব এখন ব্যাথা করছে ।
IMG_2272
আবার শেষের দিকে সিমেন্টের রাস্তা যার কারণে পায়ের উপরে বেশি চাপ পরছে । আমি অনেক আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামছিলাম । নিচে অনেকগুলো ঘরবাড়ি দেখতে পেলাম।
IMG_2281
জায়গাটা অন্যরকম লাগছিল কারণ হয়ত গত ৩ দিন আমরা ছিলাম মেঘের সাথে আর আজকে অনেক নিচে যেখানে নদী বয়ে যাচ্ছে । খোলা শব্দের অর্থ নদী তাই সেই জায়গাকে অনেক গুরখেখোলা বলে ।  গুরখেয়ের উচ্চতা ২১৪৩ মি আর ফালুটের উচ্চতা ৩৬০০ মি । আমরা ৩:৩০ ঘণ্টার মধ্যে ১৪৫৭ মি নিচে নেমেছি তাই এরকম বৈচিত্র্য একটু অস্বাভাবিক লাগার কথা । সেখানে কিছু ছোট বাচ্চারা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল সালেহীন আর আমি আমার সব চক্লেট দিয়ে দিলাম । আমি একটু দেরিতে পোঁছালাম হোটেলের কাছে । দেখলাম ইস্রাইলি ছেলে আর মেয়েটা সেখানে আছে । তারা গোসল করে যাচ্ছিল মনে হচ্ছিল। গাইড আমাদের বলল আমরা এখানের ঝনার পানিতে গোসল করতে পারি । আমি জেনে অনেক খুসি হলাম কারণ আমরা ২ দিন গোসল করিনি আর আমার পায়ের অবস্থা অনেক খারাপ । গোসল করে একটু সস্তি পাওয়া যাবে । আমার কাছে গোসল করার জন্য কিছু ছিল না ,  একটাই ট্রাউজার নিয়ে এসেছিলাম । ঠিক করলাম ট্রাউজারটাই ভিজাব । আমরা তিনজন গেলাম একসাথে কিন্তু ওয়াহিদ ভাই বলল পরে নামবে । আমি আর সালেহিন জুতা খুলে নেমে গেলাম । কিন্তু একি অনেক ঠাণ্ডা পানি, এতা আসলে বরফ গলা পানি  । এর মধ্যে গোসল করা ত দুরের কথা পা কিছুক্ষন পরে জমে যাচ্ছে ।  কিন্তু আমার পায়ের যন্ত্রণার কারনে হয়ত আমার ঠাণ্ডা অনুভুতি কম হচ্ছিল । সালেহীন উঠে গেল সে আর সেই পানিতে থাকতে পারছিল না । গোসল করতে পারব না তাই আমি সেই পানি দিয়েই আমার গা ভাল করে ধুয়ে নিলাম ।
IMG_2283
ঠাণ্ডার কারণে আমার পা জমতে লাগছিল তাই আমিও উঠে গেলাম আর ওয়াহিদ ভাইকে বললাম নামতে । ওয়াহিদ ভাই পানিতে একটু পা দিয়েই আমাকে বলল তুমি কি মানুষ ? এরকম ঠাণ্ডা পানিতে গা ভিজিয়েছ । আমাদের গাইডের উপরে রাগ হচ্ছিল যে সে আমাদের সেখানে গোসল করার পরামর্শ দিয়েছিল । আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে সেখান থেকে ফিরে এলাম । আমাদের খাবার রেডি হয়ে গেল, সেই থুকপা কিন্তু এটা সাবারগ্রামের বানানো থুকপা থেকে অনেক মজার । আমি আগে হিন্দি পড়তে পারতাম কিন্তু এখন কিছু অক্ষর ভুলে গেছিলাম । “ই” অক্ষর চিনতে পারছিলাম না । পরে গাইডের সাহায্যে পরে ফেলাম হোটেলের নাম “ইডেন হোটেল “। গাইড আমার কাছ থেকে বেথার টেব্লেট চাইল বুঝলাম তারও পায়ের অবস্থা ভাল না । আমিও সাথে একটা ব্যাথার টেবলেট খেয়ে নিলাম । আমরা সেখানে বসে চা খাচ্ছিলাম । এরকম একটা জায়গাই যার পাশদিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছিল আর আসে পাশে শুধুই বড় বড় পাইন , দেবদারু গাছ  গাছের পাহাড়ে ঘেরা সেখানে চেয়ারের উপরে পা তুলে চা খাবার মজাই আলাদা । আমরা সেখান থেকে খাবার শেষ করে রওনা দিলাম । এবার একটু উপরের দিকে উঠবো তাই একটু ভাল লাগছিল আমার পায়ে ব্যাথা কম লাগবে । গাইড আমাকে জানালো আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি আমাদের একটু জোরে হাঁটতে হবে । একটু উপরের দিকে উঠে আমরা আসলাম সেই সমতল সামাদান গ্রামের কাছে । সেখানে গ্রামের পাশদিয়ে রাস্তা চলে গেছে আর রাস্তার ডান পাশে বন, বড় বড় গাছ তবে তেমন ঘন ছিলনা । কিন্তু নিচের দিকে গভীর ছিল । গাইড বলল এটা ন্যাশনাল পার্কের বাইরে । আমরা আর সাঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে নাই । আমি গাইডের সাথে দ্রুত হাঁটছিলাম ।
IMG_2287
আমি ব্যাথার টেবলেট খেয়েছিলাম তাই একটু ভাল লাগছিল । ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন এবার পিছে পরে গেল । আমাদের চলার পথে আশেপাশে গ্রাম ছিল অনেক । আস্তে আস্তে আমরা উপরের দিকে উঠতে লাগলাম । বেশ কিছুক্ষন উপরের দিকে হাঁটার পরে আমরা একটা ব্রিজের কাছে এসে রেস্ট নিলাম ।
IMG_2304
সেখান থেকে আবার নিচের দিকে নামতে হবে ঝর্নার কাছে।এবার আমি নিচের দিকে দ্রুত নামছিলাম ।আসলে আমি ব্যাথার টেবলেট খেয়ে পায়ের ব্যাথা পাচ্ছিলাম না তাই একটু সাহস বেড়ে গিয়েছিল ।  ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীনের অবস্থা ভাল ছিল না । গাইড বলল এখানে মাছ দেখা যায় তারা স্রোতের বিপরীতে  লাফ মারে আর সেখানে একটু স্যাঁতস্যাঁতে রাস্তা ছিল । সেখান থেকে আবার আমরা উপরের দিকে উঠা শুরু করলাম । । আমরা রাম্মানের কাছে চলে এসেছি । গাইড বলল আমরা রাম্মানে বসে ঠিক করতে পারি আমরা সেখানে থাকবো  না শ্রীখোলা যাবো।  মাঝ দিয়ে ঝর্না বয়ে গেছে আর ওপারে সিক্কিম । সিক্কিম থেকে মাইকিং হচ্ছিল , সেখানে দীপাবলির কারণে বিভিন্ন অফার এর মাইকিং হচ্ছে । গ্রামটা একটু উপরে উঠে দেখি একটা মাঠ আর সেখানে দীপাবলি উপলক্ষে ফুটবল খেলা হচ্ছে । পাহাড়ের উপরে একটু ঘেরাও দিয়ে খেলা আর দর্শক অনেক ছিল ।
IMG_2310
IMG_2312
আমি উঠা মাত্রই আমার সামনে থেকে বল নিচের দিকে পরে গেল সাথে সাথে একটা ছেলে দ্রুত বলের পিছনে নেমে গেল। তাদের কাছে হয়ত উঠা নামা কোন বেপার না , যদিও তারা টেন্ডুল্কারের অ্যাড এর মত বুস্ট খাইনা প্রতিদিন। সেখানে খেলা দেখছিলাম এর মধ্যে একটা মেয়ে বাচ্চা নিয়ে দারিয়ে ছিল আর একটুর জন্য ফুটবলটা বাচ্চার মাথায় লাগেনি । আমি সেখান থেকে চলে গেলাম একটা হোটেলের কাছে । আমার শ্রীখোলায়  থাকার ইচ্ছা ছিল কিন্তু দেরি হয়ে গেছে অনেক, তাই আমরা যদি এখনি রওনা দেয় তাহলে সন্ধার আগে  পৌছাতে পারবো । ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন অনেক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল আর আসতে একটু দেরি করছিল । রাম্মান থেকে সিক্কিম দেখতে অনেক সুন্দর লাগছিল । পাহাড়ের গায়ে সুন্দর বাড়ি আর খাঁজ কেটে চাষাবাদ করছে ।
IMG_2314
৫মি পরে ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন আসল তারাও ফুটবল খেলা দেখছিল ।  রাম্মানে সেখানে আমরা বসে ছিলাম সেখানে ভাল হোটেল ছিল কিন্তু সেখানে থাকলে পরের দিন জিপ না ধরতে পারার অনিশ্চয়তা বেশি ছিল । তাই আমি ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীনকে বললাম আমরা এখনই চা খেয়ে বেরিয়ে পরব । কিন্তু তারা অনেক কাহিল ছিল আর সেখানে থাকার কি ব্যবস্থা আছে দেখছিল । শেষমেশ তাদের রাজি করলাম যাবার জন্য তখন বেলা হয়নি কিন্তু সেখান থেকে শ্রীখোলা ৯কিমির মত আর সেখানে যেতে যেতে অন্ধকার হয়ে যাবে । চাচ্ছিলাম তাড়াতাড়ি দারজেলিং এ যেতে কারণ এই ৫ দিন বাসায় আম্মার সাথে কথা হয়নি । আমিতো  ভাল আছি কিন্তু আমার আম্মা একটু বেশি টেনশন করে । আমরা রওনা হলাম একটু সোজা পথে কিন্তু আবার একটা গ্রামের ভিতর দিয়ে নিচের দিকে খাঁড়া নামতে হল । আমার ব্যাথার টেবলেটের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল । আর এবার নামছিলাম পাথরের রাস্তা দিয়ে । পরে কিছুক্ষণ একটু সোজা রাস্তা পেয়ে সস্তি পেয়েছিলাম । আর মাঝে মাঝে একটু উপরের দিকে উঠতে হচ্ছিল । সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল আর আমরা পাহাড়ের গা ঘেঁষে রাস্তা দিয়ে নিচের দিকে নামছিলাম । কিন্তু তেমন সরু ছিলনা যে পরে যাবার ভয় থাকবে ।
IMG_2338
আর অপরপাশে ছিল রিম্বিকের পাহাড়  । তারা এত সুন্দর করে পাহাড় কেটে চাষ করে যে মনে হচ্ছিল তারা পাহাড়ে নক্সা করে রেখেছে । আমি গাইডকে বললাম আমি আগে রাতে ট্রেকিং করেছি । আসলে আমি আগে একবারই ট্রেক করেছি তাও আবার চাঁদের আলোতে । সেও আমাকে বলল রাতে ট্রেক করেছে এই সান্দাকফুর পথে । আস্তে আস্তে আমার পায়ের অবস্থা এতো খারাপ হল যে ধাপ ফেললে ব্যাথা করছিল । আসলে আমি ব্যাথার টেব্লেট খেয়ে নিচের দিকে বেপরোয়া হাঁটছিলাম সে কারণে পায়ের ব্যাথা তখন অনুভব করিনি কিন্তু এখন বুজছি যে আমার এই পা নিয়ে আগে দ্রুত নিচের দিকে নামা উচিৎ হয়নি । একটাই সস্তি ছিল যে আজকে আমাদের কষ্টের শেষ দিন । আগামীকাল ২-৩ ঘণ্টা হেঁটেই রিম্বিক যাওয়া যাবে ।  তাই কষ্ট হলেও ফিরে যাবার একটা আনন্দ ছিল সাথে । আমাদের পথের পাশে অনেকগুলো ঝর্না পেয়েছিলাম । কিন্তু সেখানের  পানি পান করিনি কারন ব্লগে আগেই পরেছিলাম যে আমরা যত নিচের দিকে যাব সেখানের ঝরনার পানি খাওয়া ততটা ক্ষতিকর । অন্ধকার হয়েই এসেছিল সেই সময় আমরা পৌঁছে গেলাম শ্রীখোলার কাছে । শ্রীখোলার নদীর আওয়াজ পাচ্ছিলাম । আমার নামার মুহুতটা ভাল করে মনে আছে । আমরা ছিলাম অনেক উপরে আর সেখান থেকে নিচে নামতে হবে সোজা নিচের দিকে আর যেখানে নামব সেটা হল একটা বাড়ির ছাদ ।
IMG_2344
সে সময় নিচের দিকে এক ধাপ ফেলতে আমার ১ সেকেন্ডের বেশি সময় লাগছিল তারপর আবার নিচের দিকে সোজা নামতে হবে । আমার মনে হচ্ছিল ১০মি সেখানে বসে থেকে পরে নামি কিন্তু এত কাছে আর সবাই নেমে গেছে তাই বেশি বিশ্রাম নিলাম না ।  মনে হয় সেই অল্প রাস্তা নামতে আমার ১০মিনিট সময় লেগেছিল  আর সেই ছাদ থেকে নিচে নামতে অনেক কষ্ট হয়েছে । আজকে নামতে হলে হয়তো একটা লাফ মেরে দিতাম কিন্তু সেদিন সেরকম পায়ের অবস্থা ছিল না । আমি একটা ছোট ব্রিজ পার হয়ে হোটেলের কাছে গেলাম । আমার নামাতে যতক্ষণ লেগেছে তার মধ্যে গাইড হোটেল ঠিক করে ফেলেছে আর ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন সেখানে উঠে গেছে । আমি দেখলাম গাইড আমার জন্য হোটেলের বাইরে অপেক্ষা করছে । আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলল “ আপলোগ আজ বহত আচ্ছা ট্রেক কিয়া “ । কিন্তু আমার পায়ের যে অবস্থা ছিল একজন ভাল ট্রেকারের হয়ত সেরকম অবস্থা হয়না । বেশি দোষ ছিল আমার জুতার, একেবারেই ট্রেকের অনুপযোগী।

শ্রী খোলায় ট্রেকের শেষ রাতঃ

আমি কোন মতে গিয়ে উঠলাম হোটেলের রুমে। ভিতরে গিয়ে দেখি ৬ টা বেড ছিল । আমি দেখে অবাক হলাম । কেন আমাদের ৩ জনকে ৬ টা বেড দিল ? আমি জানতাম বেড অনুসারে ভাড়া হয় । কিন্তু ওয়াহিদ ভাই বলল এখানে আর কেউ থাকবে না । কিছুক্ষণ পরে গাইড বলল এখানের ভাড়া ২শ রুপী।  টইলেট অবশ্য বাইরে ছিল। কিন্তু আমাদেরকে কেন ৬ বেডের রুম দিল কিছু বুঝিনি তখন । রুম তেমন ভালো করে পরিষ্কার ছিল না । কিন্তু আমাদের জায়গাটা অনেক ভাল লেগেছিল । আমরা রুমের ভিতরে ঝর্নার শব্দ শুনতে পারছিলাম । আজ সারারাত আমাদের সেই শব্দ শুনতে হবে । আমরা গল্প করছিলাম আজকের ট্রেক নিয়ে । আজকে আমরা অনেক বেশি ট্রেক করেছি আর আমরা মেঘের উপর থেকে নেমে আজ ঝর্নার উপর শুয়ে আছি । আমাদের দেশেও এরকম ঝর্না আছে আর চাইলেই এরকম হোটেল বানানো যায় । আমার হাত পা এপাশ ওপাশ করার মত অবস্থা ছিল না । পুরো পা ব্যাথা । সালেহীন আর ওয়াহিদ ভায়ের অবস্থাও তেমন ভাল ছিল না কিন্তু আমার পায়ের অবস্থা অনেক খারাপ । পা নিয়ে অনেক বিপদে ছিলাম একটু নাড়াচাড়া করলেই ব্যাথা করছিল । আমার কাছে আর ব্যাথার টেব্লেট ছিল না । আমি খেয়েছি মাত্র ২-৩ টা কিন্তু সবাইকে দিতেই আমার সব টেব্লেট শেষ হয়ে গেছে । সালেহীন এর কাছেও পেলাম না । টইলেটে যাওয়া লাগবে কিন্তু এই পা নিয়ে তখন যাব কি করে সেই চিন্তাই ছিলাম আর অনেক ক্ষিধাও লেগেছিল । সালেহীন আমাদের কাছ থেকে আরেক দফা টাকা নিল । আমার কাছে সেটাই শেষ সম্বল ছিল আর আমাদের ট্রেকও শেষ শুধু আগামীকালকের পথ । আমাদের অনেক ক্ষিধা লেগেছিল । আমরা ১ ঘণ্টার মত বিশ্রাম করে  হোটেলের দিকে গেলাম । হোটেলটা অনেক বড় ছিল আর আমরা একটা কোনায় বসলাম । সেখানে আবার খাবারের মেনু ছিল আর তালিকায় অনেক রকম খাবার ছিল । আমরা রাতের খাবারের মেনু দেখছিলাম, এরই মধ্যে ইস্রাইলী মেয়েটা একটা চাদর পরে আসল আর আমাদের দেখে আমাদের টেবিলে বসলো । সেখানে আমরা জানতে পেলাম তারা আসলে দম্পতি আর তারা এখানে ১ মাসের মত প্লান নিয়ে এসেছে । মেয়েটা আর্টিস্ট আর সে এর আগে ইন্ডিয়ায় এসেছে  আর এরপরে তারা সিক্কিম যাবে। ওয়াহিদ ভাই ইন্ডিয়াতে এর আগে অনেক ঘুরেছে আর ইন্ডিয়ান অনেক বই পড়ে । মেয়েটির ইন্ডিয়ার বেপারে জানার অনেক ইচ্ছা ।   কিছুক্ষণ পরে তার স্বামী আর অস্ত্রিয়ার ভদ্রলোক এক সাথে আসল আর মেয়েটা ওদের আমাদের সাথে বসার জন্য বলল। অস্ট্রিয়ার ভদ্রলোকও এরকম ইতিহাসের বেপারে জ্ঞান রাখে আর ওয়াহিদ ভায়ের ইন্ডিয়ার ইতিহাসের উপরে জ্ঞান দেখে মুগ্ধ হল । আমিও সেখানে প্রথমবার ওয়াহিদ ভায়ের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহের বেপারে জানলাম। তারা বাংলাদেশের বেপারে জানতে চাইলো আর আমি আর সালেহীন তাদের বাংলাদেশের বেপারে বললাম । সেখানে কি কি দেখার আছে তাও বললাম । ইস্রাইলি মেয়েটা জানতে চাইলো সে কিভাবে বাংলাদেশে যাবে ইন্ডিয়া থেকে কিন্তু ওয়াহিদ ভাই বলল আসলে ইস্রাইলিরা বাংলাদেশে যেতে পারে না । সে একটু মন খারাপ করল কিন্তু ওয়াহিদ ভাই বুঝাল আসলে আমাদের মধ্যে এরকম হিংসার সম্পর্ক নাই । কিন্তু কিছু লোকের ধর্ম নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ির জন্যই এই অবস্থা আর তাদের সংখ্যাও অনেক কম । ওয়াহিদ ভাই মাঝে মাঝে রসিকতা করছিল আর হাসাহাসির শব্দ বেশি হচ্ছিল।   আমাদের গাইড এসে বলল এই বাড়ির মালিকের মেয়ে মারা গেছে অসুখে, তাই আমরা যেন হাসি ঠাট্টা না করি । আমাদের গাইড তাদের সাহায্য করছিল খাবারের বেপারে । সে সময় বুঝলাম যে আমাদের কেন ৬ বেডের বিছানা দিয়েছে তারা । হাসি ঠাট্টা তবুও কমছিল না । আমাদের খাবার শেষ হয়ে এসেছিল । গাইড আমাদের জানালো আগামীকাল সকালে তারা মালিকের মেয়ের মৃত দেহ এখানে আনবে দাফনের জন্য তাই আমাদের ৮টার আগেই এখান থেকে চলে যেতে হবে আর নাস্তায়  কর্ণ ফ্লেক্স ছাড়া কিছু পাব না । আমাদেরকে উনারা এখানে রাতে থাকতে দিয়েছে এটা অনেক বেপার তাই সকালের নাস্তা নিয়ে কোন আপত্তি করলাম না। কিন্তু অস্ট্রিয়ার ভদ্রলোক সকালে সেই নাস্তা করতে চাইলনা । রিম্বিক ছাড়া সেখানে আর ভাল খাবার পাওয়া যাবে না । ৯টা পার হয়ে গিয়েছিল তাই আমরা সকালের খাবারের অর্দিডার দিয়ে চলে গেলাম । সেখানে ঠাণ্ডা অনেক কম ছিল কিন্তু একেবারেই ঠাণ্ডা ছিল না তা কিন্তু না । তবে মানেবাঞ্জানের  থেকেও ঠাণ্ডা অনেক কম । পায়ের ব্যাথা নিয়ে কষ্ট করে টইলেটে গেলাম । আমার শরীর একেবারে চলছিল না । আমি ট্রাওজার পরে আর পায়ে মুভ ক্রিম লাগিয়ে ঘুম দিলাম । যদিও বাইরে ঝর্নার আওয়াজ ছিল অনেক কিন্তু তাতে ঘুমের কোন সমস্যা হল না ।  মাঝ রাতে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেল তবে ব্যাথার কারণে না । আমার ট্রাওজারের ভিতরে কিছু একটা ঢুকেছে আর সুরসুরি দিয়ে চলছে । আমার পায়ের অবস্থা এত খারাপ যে দাড়িয়ে ঝাড়া দিব তার জোর নাই । আমি প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম যে সেটা বিছা কিনা । সেটা কি কামড়াতে পারে কিনা, তা বোঝার উপায় নাই আর এই অবস্থায় কি করবো যাতে সেটা সহজে বেরিয়ে আসে বুঝতে পারছিলাম না । পোকাটা আমার হাঁটুর উপরে ছিল । আমার গায়ে লেপ চাদর ছিল তাই পোকাটাকে বেড়ানোর জন্য উপর থেকে একটা পথ করে দিলাম । কিন্তু সয়তান পোকাটা আরও নিচের দিয়ে চলে গেল । কি আর করার আরেকটু বেশি পথ করে দিলাম। অনুভব করলাম পোকাটা আমার পায়ে লেগে আছে আমি ঝাড়া দিলাম । কিন্তু যেদিকে ঝাড়া দিয়েছি সেদিকে আবার সালেহীন শুয়েছিল । আমি আর সালেহীনের কথা চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পরলাম । সেটা একটা গান্ধী পোকা ছিল , আমরা নিচ তালায় ছিলাম আর তাই এসব পোকা এখানে ঢুকেছে । যাই হোক এর পরে নিশ্চিন্তে ঘুমান গেল । আজ সকালে সূর্যোদয় দেখা যাবে না তাই একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠলেই চলবে আর আমাদের মাত্র ৩ ঘণ্টা হাঁটা লাগবে । কিন্তু তাই বলে দেরি করে ঘুমাতে পারলাম না । কারণ আমাদের সকাল ৮ টার আগেই হোটেল ছেড়ে দিতে হবে । ৬:৩০ এর  সময় ঘুম থেকে উঠে গেলাম । কিন্তু পায়ের অবস্থা অনেক খারাপ । পায়ের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যাথা ছিল । নিচের দিকে এক ধাপ ফেলা অনেক যন্ত্রণার ছিল ।আমরা ব্যাগ গুছানো শেষ করে বাইরে আসলাম কিন্তু আমাদের খারার তখনও রেডি হয়নি  । আমরা একটু বাইরের দিকে হাঁটতে বাহির হলাম । অনেক সুন্দর জায়গা । হোটেলের ঠিক পিছন দিয়ে একটা ঝর্না বয়ে চলেছে , তার আওয়াজ আমরা সারা রাত শুনেছি ।
IMG_2352
IMG_2357
IMG_2354
সালেহীন বলল তারও পায়ে অনেক ব্যাথা কিন্তু সে অনেকটা স্বাভাবিক হাঁটছিল । আমার একটু মাথা ব্যাথাও করছিল । সারা ট্রেকে আমার আজকে প্রথম মাথা ব্যাথা হল কিন্তু এখন কাছে কোন টেব্লেট পেলাম না । হাটার সাথে সাথে আস্তে আস্তে পা একটু খুলছিল । আমরা জায়গাটার আশে পাশে ঘুরে দেখলাম । এই জায়গায় চাইলে ২ দিন থাকা যায় । ৩ তালা হোটেল , অনেক ধরলের খাবার পাওয়া যায় । একেবারে ঠাণ্ডা না আর আশে পাশ দিয়ে এরকম সুন্দর ঝর্না বয়ে গেলে আর কি চাই । হোটেলের নাম ছিল  “গোপারমা” হোটেল । আমরা ঠিক ৮টার মধ্যে খাবার সেরে রওনা দিলাম । তাদের আত্মীয় স্বজন আসা শুরু করেছিল ।

শ্রীখোলা থেকে রিম্বিক

আমরা ঝরনার উপরে শ্রীখোলার বড় কাঠের ব্রিজের উপর দিয়ে যাচ্ছিলাম । ব্রিজের উপর থেকে নদীটা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে ।
IMG_2368
আমরা সেখানে ছবি তুলছিলাম এমন সময় একটা স্কুলের ছেলে আমাদের ছবি তুলা দেখে নায়কের মত পোজ দেওয়া শুরু করল। সে আর সেখান থেকে সরে না, ঠিক ব্রিজের মাঝখানে । কি আর করা, যায় তাকে নিয়েই ছবি তুলতে হল ।
IMG_2367
আমাদের আজকের রাস্তা ১কিমির মত পাথরের রাস্তা তার পরে পিচের রাস্তা । এই পাথরের উচা নিচা রাস্তার জন্য আমার মায়ের অবস্থা  খারাপ হয়েছে রাম্মান থেকে শ্রী খোলা আস্তে । তাই আজকে অনেক আস্তে আস্তে হাঁটছিলাম পাথরের উপর দিয়ে । সালেহীন্ আর ওয়াহিদ ভাই আমার আগিয়ে গেল । আমি কোন মতেই আমার গতি বাড়াতে পারছিলাম না । কিছুক্ষন পরে ইস্রাইলি দম্পতি আর অস্ট্রিয়ার লোকটা আমার আগে চলে গেল । তখন খারাপ লাগছিল আমার পায়ের অবস্থার জন্য । রাস্তা এমন যে আমার হাঁটুতে লাগছে । আমাদের যাবার পথে অনেক লোক এদিকে আসছিল, তারা হোটেলের দিকে যাচ্ছিল দাফনের জন্য । আমি ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীনকে ধরার চেষ্টায়  কোন রেস্ট না নিয়ে হাঁটছিলাম । কিন্তু তারা স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিল তাই তাদের দেখায় যাচ্ছিল না । আমি একাই হাঁটছিলাম  একটা গতি ঠিক রেখে আর পথ একটাই তাই গাইডকে লাগছে না, আজকে সবাই নিজের মত হাঁটছে । আমি ক্যামেরা বের করে সিক্কিমের পাহাড় আর পথের মাঝে ঝরনার ছবি তুলতে তুলতে যাচ্ছিলাম ।
IMG_2371
IMG_2372
IMG_2374
IMG_2378
অনেক লোক আসা শুরু করেছিল হোটেলের দিকে । কিছুক্ষণ পরে দেখলান অনেক লোক আসছে   একটা ট্রাকের সাথে, সেখানে মহিলার লাশ ছিল ।
IMG_2380
আমরা যেই পথে যাচ্ছিলাম তার অপরপাশে ছিল সিক্কিম   আর মাঝ দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল ছিল রাম্মান নদী । যাবার পথে নদীতে একটা বড় বাধ দেখলাম ।
IMG_2381
এভাবে আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম রিম্বিকের কাছে আর সেখানে আমি কাউকে পেলাম না । ভেবেছিলাম গাইড আমার জন্য হয়তও অপেক্ষা করবে । সামনে দুইটা রাস্তার মুখ দেখতে পেলাম । আমি হিন্দি পারি তাই সেখানের মানুষকে জিজ্ঞাস করে করে পোঁছালাম জিপের কাছে । গাইডকে পেলাম । সে বলল আমার পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হবে পুলিশ স্টেশনে চেক আউটের জন্য । ওয়াহিদ ভাই আর সালেহীন করে ফেলেছে আর আমার পাসপোর্ট আবার সালেহিনের কাছে । তাই তার কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে সেখানের অফিস এ গেলাম । তারা এন্ট্রি করে এসে সালেহীনকে দেখলাম অস্ট্রিয়ার লোকটার সাথে কথা বলতে কিন্তু ওয়াহিদ ভাইকের পেলাম না । গাইডের নাকি টিকিট কাটার কথা ওয়াহিদ ভাইকে পেলাম আবার সালেহীকে পেলাম না । ১০-১৫ মি এভাবে কাটল আর আমাদের টিকেট কাটাও হয়ে গেল । সালেহীন আমার কাছ থেকে টাকা চাইল কিন্তু আমার টাকা শেষ । আমি শেষ পর্যন্ত ওয়াহিদ ভায়ের কাছে ধার নিলাম । আমরা আসলে ২ ঘণ্টার কম সময়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম রিম্বিকে আর হাতে আমাদের অনেক সময় ছিল । আমি সেখান থেকে একটা মগ কিনলাম মানেভঞ্জনে যেরকম নকশা করা মগে করে চা খেয়েছিলাম । ওয়াহিদ ভাই অস্ট্রিয়ার আর ইস্ত্রাইলি দের সাথে আবার গল্প করছিল । আমি আর সালেহীন যোগ দিলাম আর মোমো অর্ডার দিলাম এক দোকানে । আমি স্বাভাবিক ভাবে হিন্দি বলছিলাম সেখানের হোটেলের লোকদের সাথে তাই তারা আমার দিকে অস্বাভাবিকভাবে তাকাছিল আর আরও অবাক হল আমাদের পানির বোতল দেখে । আমরা বললাম এটা আমরা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে এসেছে আর আমাদের সাথে আছে । আমরা ট্রেকে কথাও প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস ফেলিনি আর আমরা যা যা জিনিস কিনেছিলাম তার মোড়ক আমাদের ব্যাগে রেখে ছিলাম। আমরা সেখানে একসাথে গ্রুপ ছবি তুললাম কিন্তু আমি ছিলাম না ।
IMG_2382
আমরা অনেক বার মোমো  অর্ডার দিয়েছি । কিন্তু ভালো  যে আমাকে হিসাব করতে হবে না তার জন্য আমাদের একাউনটেন্ট সালেহীন আছে । আমরা দুনিয়ার গল্প করছিলাম । ওয়াহিদ ভাই ক্রিকেট খেলেনা কিন্ত তাদের ক্রিকেটের রুল বুজাচ্ছিল । এভাবেই সময় কাটাচ্ছিলাম।  তারাও দার্জিলিং যাচ্ছে কিন্তু দার্জিলিং এ গিয়ে কি করবে কোন প্রস্তুতি নাই। আমি তাদের সেখানের ঘুরার জায়গার লিস্ট দেখালাম । আর বেশিক্ষণ সেখানে বসে থেকে ভাল লাগছিল না আর সালেহীন একটা মগ কিনতে চাচ্ছিল আমার মত তাই আমরা বেরিয়ে গেলাম আর তারাও বেরিয়ে পড়ল । সেখান থেকে কল করার চেষ্টা করলাম বাসায় কিন্তু সম্ভব হল না । পরে ঠিক করলাম দার্জিলিং এ গিয়ে বুথ থেকে কল করব । সেখানে কোন ওষুধদের দোকানও নাই ব্যাথার ট্যাবলেট কিনার জন্য । সময় কাটানোর জন্য অনেক কিছু করছিলাম । আমি যে হিন্দি পড়তে পারি তা ওয়াহিদ ভাইকে দেখানোর জন্য একটা মন্দিরের সাইনবোর্ড পড়ছিলাম । আমাদের গাইডরা আমাদের সাথে ছিল । জিপটা মানেভঞ্জন হয়ে দার্জিলিং যাবে তাই তারা আমাদের সাথে মানেভঞ্জন পর্যন্ত যাবে । গাইড বলছিল তার বুটের অবস্থা ভালো না তাই সে আগেরদিন স্যান্ডেল পরে হাঁটছিল তাই ভাবছিলাম তাকে যাবার আগে একটু বেশি টাকা দিব কিন্তু আমাদের কাছে সব টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল আর ডলার দার্জিলিং ছাড়া ভাঙ্গানোর উপায় নাই । শেষ মেশে আমাদের গাড়ি চলে আসল । আমাদের ট্রেক এখানেই শেষ বলতে পারেন । সেখান থেকে দার্জিলিং  এ জিপে করে যাওয়ার পথ মটেও ভাল কাটেনি । আমার পায়ের যন্ত্রণার কারণে থাকতে পারছিলাম না  আর গাড়ি মানেভঞ্জন যাবার পরে নষ্ট হয়েছিল । আমরা ৭টার দিয়ে দার্জিলিং এ গিয়ে পৌঁছেছিলাম আর সেখানে ব্যাথার টেব্লেট খেয়ে তার পরে ব্যাথা থেকে রেহায় পেয়েছিলাম । পরে দার্জিলিং  এ অস্ট্রিয়ার লোক এর সাথে দেখা হয়েছে । ইস্রাইলি দম্পতিদের সাথেও দেখা হয়েছিল তারা যখন সিক্কিম যাচ্ছিল । দার্জিলিং এ আমাদের সময় অনেক ভাল কেটেছে কিন্তু ৫ দিন ট্রেক করার কারণে একটু অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছিল । আমার আধুনিক সমাজের জিনিসে খাপ খাওয়াতে একটু সময় লাগছিল তখন। আমরা সবাই একসাথে ট্রেক করে অনেক মজাই পেয়েছি । হইত আবার ৩ জন একসাথে সান্দাকফু – ফালুট ট্রেক করতে যাব ।

তপু ভাই আর সালেহীন আমার লেখার বানান শুদ্ধ করতে অনেক সাহায্য করেছে তার জন্য তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ ।

1 comment:

  1. খুবই ভালো হয়েছে বাশার। অনেক কষ্ট করেছ, সেটা সার্থক।

    ReplyDelete